ডেস্ক রিপোর্টঃ
দেশে গড়ে প্রতিদিন চারটি করে ধর্ষণের খবর গণমাধ্যমে আসে। পুলিশের তথ্য বলছে, শুধুমাত্র গত বছরেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে পাঁচ হাজার চারশোটি। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন ১৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।
অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষকেরা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সবশেষ সিলেটের এমসি কলেজ হোস্টেলে এক গৃহবধূকে দলবেধে ধর্ষণের ঘটনায় যখন সোচ্চার পুরো দেশ, তখন লজ্জায় ডুবিয়েছে মুমূর্ষু স্বামীর জন্য রক্ত দেয়ার কথা বলে মিরপুরে আরেক নারীকে ধর্ষণের ঘটনা।
বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ধর্ষণের ঘটনাগুলো থেকে যায় অন্তরালে। বেসরাকারি সংস্থা আইন ও শালিশ কেন্দ্র সংবাদপত্র থেকে তথ্য নিয়ে বলছে, ২০১৮ সালে ধর্ষণের ঘটনা ৭শো ৩২টি, যা পরের বছর বেড়ে দাঁড়ায় ১৪শো ১৩। আর চলতি বছরের ধর্ষণের ঘটনা ৯ শো ৪৮টি।
তবে, পুলিশ সদর দপ্তরের হিসেবে ধর্ষণের ঘটনা অনেক বেশী। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চার হাজার ছয়শো ২৭ টি। যা ২০১৯ সালেই বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার চারশোটি । সে হিসেবে প্রতি এক লাখ নারী- শিশুর মধ্যে চারজনই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।আর চলতি বছরের এ মাসেই ঘটেছে ৫৯ টি ধর্ষণের ঘটনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন,’মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ এবং নীতি নৈতিকতার সঙ্কট আছে। এখন ভালো ছাত্র হলেই যে ভালো মানুষ হবে তা নয়, যার যার বেড়ে উঠার ওপর আচার আচরণ প্রতিফলিত হয়। যার বেড়ে উঠা সুন্দর হয়নি, তাহলে তো সে বিবেক চালিত হবে না।’
অপরাধবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন,’মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ কম। বাইরে বেরুচ্ছে না। আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি নেই বললেই চলে, এই সবকিছু মিলিয়ে তারা কিন্তু যখন সুযোগ পাচ্ছে, তখন খারাপভাবে সুযোগটাকে গ্রহণ করছে।’
বিশ্লেষকদের মতে, দেশের চাঞ্চল্যকর দু’একটি ঘটনা ছাড়া বেশীর ভাগ ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীরা কোন না কোন উপায়ে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে তাই কমছে না ধর্ষণ।
ড. নেহাল করিম আরও বলেন,’দু একটার সাজা হয়েছে বলে যে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে; কোন অবস্থাতেই না। আমাদের দেশে আইনের শাসন নেই বলে তারা গা ছাড়া দিয়ে উঠেছে।’
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন,’আমাদের দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি অন্য কাউকে যাতে উৎসাহিত করতে না পারে।’
ধর্ষণের বিষয়টি জাতীয় সমস্যার মধ্যে অন্তর্ভুক্তি করার পাশাপাশি বিচারের ক্ষেত্রে অপরাধীর রাজনৈতিক কোন পরিচয় যেন বিবেচনা করা না হয় তারও পরামর্শ দিচ্ছেন সমাজ ও অপরাধ বিজ্ঞানীরা।