সুকৃতি ভট্টাচার্য্যঃ
এক বছর ধরে এই ওল্ড হোমে আছি।
এক বছরে মনটা ধরে গেছে কোথাও ওল্ড হোম ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না, বেশ খাচ্ছি, দাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি। ওল্ড হোমের যিনি দায়িত্বে আছেন তিনি একজন অবসর প্রাপ্ত। খুব উৎসাহ নিয়ে সবার সাথে গল্পগুজব করে সময় কাটান।
কতোজন কতো ব্যথা নিয়ে ওল্ড হোমে এসেছে, একেক জনের মনের ব্যথা একেক রকম,তবে সবাই মিলে মিশে বেশ সময় কাটে।সুখ দুঃখের কথা বলে মনটা হালকা করে।
দায়িত্ব প্রাপ্ত ভদ্রলোকের মাঝে একটা আলাদা বৈচিত্র্যের ছোঁয়া আছে। প্রতিদিন প্রাতঃভ্রমনে বের হয়, আমার সাথে দেখা হলে গুড মর্নিং ছাড়া আর কোন আলাপ হয় না। ভদ্রলোক অনেক আগে থেকে এই ওল্ড হোমে আছে, প্রকৃতির বৈচিত্র্য বর্ণাঢ্য নিজস্বতা অনেক দেখেছি,এবার স্বেচ্ছায় ওল্ড হোমের আনন্দ, বেদনা, হাহাকার উপভোগ করতে এসেছি।
কি মনোরম ফুলের বাগান বাহারি জলের ফোয়ারা আর সন্ধ্যায় গান।
সত্যি বলতে ওই পরিবেশ আমার খুব পছন্দ হয়েছে, খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ভদ্রলোক আসার পর থেকে ওল্ড হোমের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
পোশাক পরিচ্ছদ চলন বলন খুব গাম্ভীর্য।
হালকা রঙের শার্টে তাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগতো,কিছু দিনের মধ্যে বুঝতে পারলাম তার জীবনের আর একটি অধ্যায়,দীর্ঘ শ্বাস নাকি উষ্ণশ্বাস।
তার রুম থেকে আমার পছন্দের গান ভেসে আসতো!
এই বয়সে এই গান শোনার শখ কেন মনে প্রশ্ন জাগলো।
কিছু দিন যেতেই আমাকে প্রাতঃভ্রমনে যেতে অনুরোধ জানালো। তারপর থেকে আমি ও ম্যাচিং ড্রেসে প্রাতঃ ভ্রমনে বের হতাম। বার্ধক্য জীবনের সুখ দুঃখের কথা শেয়ার করতাম। বেশ ভালোই লাগলো। একদিন রাতে বকুল গাছের তলায় বসে ভদ্রলোক অঝোরে কাঁদতে লাগলো,আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না।কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম তার অজানা কথা।
সব দুঃখ বেদনা জমানো অব্যক্ত কথা খুলে বললো আমি ও নিজেকে না লুকিয়ে গল্পে মজে গেলাম।
দুঃখ বেদনা ভুলে গিয়ে কুঞ্জ বনে বেড়াতে লাগলাম আর ভালো থাকার চেষ্টা করলাম!!!