কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎ শিল্পীরা। আর মাত্র ক’দিন পরেই হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা। পূজার প্রায় ২ মাস আগে থেকে প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মন্ডপে দূর্গা পূজা উদ্যাপন করা হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবী দূর্গা এবার দোলায় আগমণ এবং গজে গমণ করবেন।
এ বছর মুরাদনগর উপজেলায় সম্ভাব্য ১৪২টি পূজা মন্ডপে পূঁজা অর্চনা হবে। উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটি ইতোমধ্যে পূজা উদযাপনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এ বছর করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পূজা মন্ডপগুলোতে সাজসজ্জা করা হবে না। সাদা সিধে ভাবে পূজা উদ্যাপন করবেন উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়। তবে এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে পূজামন্ডপে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পূঁজার কার্যক্রম করা হবে।
উপজেলার পূজা মন্ডপ গুলো ঘুরে দেখা গেছে, মন্ডপ গুলোতে উৎসবের ছোয়া লেগেছে। বিরামহীন ভাবে প্রতিমা তৈরীর কাজ করেছেন মৃৎ শিল্পীরা। উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত রমনি পালের ছেলে হরিপদ পাল প্রতিমা তৈরীর কাজ করছেন। ত্রিশ বছর ধরে এ পেশায় আছেন তিনি। তার বাবা-ঠাকুরদা সকলেই প্রতিমা তৈরীর কাজ করেছেন। এখন নিজে তৈরী করেন প্রতিমা। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারনে দূর্গা পূজা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন তিনি। তার পরেও এবার তিনি দশটি মন্ডপ থেকে প্রতিমা তৈরীর অর্ডার পেয়েছেন। এই দশ সেট প্রতিমা তৈরীর কাজে বেশ ব্যস্ত তিনি। দু’জন কারীগর সহকারী হিসাবে তার সাথে কাজ করছেন। দিনরাত কাজ করছেন তারা। আর কয়েকদিন পরেই শারদীয় দূর্গা পূজা। নির্ধারীত সময়ের মধ্যেই তাকে সরবরাহ করতে হবে প্রতিমা গুলো। তাই নাওয়া খাওয়া ফুসরত নেই হারাধনের। তিনি প্রতিটি দূর্গা প্রতিমার সেট বিক্রি করেন ২৫ হাজার থেকে ত্রিশ হাজার টাকা।
রামচন্দ্রপুর উওর ইউনিয়নের বাখরাবাদ গ্রামের মৃৎ শিল্পী শ্যামল চন্দ্র পাল বলেন, আমরা খুব কষ্ট করে মাঠির প্রতিমা বানাই। কি করমো আর অন্য কাম করতে পারিনা তাই বাপ-দাদার পেশা আঁকরে ধরেই আছি। করোনা প্রার্দুভাবে এখন আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ, দেখার কেও নাই। তিনি আরও জানান, প্রতিমা তৈরীর জন্য ব্যবহৃত এটেল মাটি তাদের গ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে মাগনা আনা যেত। এখন সেই মাটি অন্য জায়গা থেকে টাকা দিয়ে কিনে ভাড়া করা গাড়িতে করে আনতে হয়। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে মাটি দিয়ে তৈরি করে রোদে শুকিয়ে রং করে সেগুলো উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ গুলোতে বিক্রি করা হয়। তার তৈরী প্রতিমা মুরাদনগর উপজেলা পেরিয়ে হুমনা, বাঞ্ছারামপুর, তিতাসসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাম প্রসাদ মেম্বার ও সভাপতি সাবেক অধ্যাপক নিত্যানন্দ রায় দৈনিক সকালের সময় কে জানান, ‘আমরা পূজা উদ্যাপন পরিষদের পক্ষ থেকে দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করতে প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। করোনা ভাইরাসের কারণে এবছর পূজা মন্ডপ গুলোতে সাজসজ্জা ছাড়াই সাদা সিধে ভাবে পূজা উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলার সবকটি মন্ডপে সামাজিক দুরুত্ব বজায় রেখে পূজা উদযাপিত করবেন ভক্তরা। তাঁরা জানান, এবার উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে সম্ভাব্য ১৪২টি মণ্ডপে পূজা উদ্যাপিত হবে। এর মধ্যে ৪০টি ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপকে বিশেষ নজরদারিতে রাখার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে।