বিজ্ঞপ্তি:
"কুমিল্লা টাইমস টিভিতে" আপনার প্রতিষ্ঠান অথবা নির্বাচনী প্রচারনার জন্য এখনি যোগাযোগ করুন : ০১৬২২৩৮৮৫৪০ এই নম্বরে
শিরোনাম:
দূর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত মুরাদনগরে বিএনপি’র দোয়া মাহফিল কুমিল্লায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তার ঘোষণা ১১ বছর পর ব্যবসায়ী ফারুক হত্যা মামলার রায় ডাকাতির ঘটনায় মোবাইল হারানোর জিডি নিলো পুলিশ কুমিল্লায় মায়ের কোপে মেয়ে খুন! মুরাদনগরে ভূমি সেবা সপ্তাহের সমাপনী; শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সম্মাননা প্রদান ঢাকাস্থ মুরাদনগর ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সভাপতি আমিন ও সাধারণ সম্পাদক হাবিব শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় নার্গিস আফজালকে চিরো বিদায় ধর্ষণ মামলায় কুমিল্লা থেকে প্রিন্স মামুন গ্রেফতার ব্যবসায়ীকে তিন দিনের মধ্যে মেরে ফেলার হুমকি, নিরাপত্তা চেয়ে থানায় অভিযোগ অনিয়মের সংবাদ প্রকাশে সুফল পাচ্ছে এলাকাবাস কুমিল্লায় বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, গুলি-ককটেল বিস্ফোরণ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে কুমিল্লায় সম্মাননা পেলেন ৭ সংবাদকর্মী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৭জন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র দাখিল

নূরের বোকামী না আত্মহনন?

  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০
  • ৭৪৫ বার পড়া হয়েছে
নাছির উদ্দিন, পাঠক লেখক বিশিষ্ট সাংবাদিক
নাছির উদ্দিন, পাঠক লেখক বিশিষ্ট সাংবাদিক
“পীপিলিকার পাখা উঠে মরিবার তরে”। এটি মধ্যযুগের চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের একটি পঙতি। চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের লেখক কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। তিনি ছিলেন মধ্যযুগের বাঙালি কবি। চণ্ডীমঙ্গল হচ্ছে কালকেতু ও তাঁর পত্নী ফুল্লরার প্রতি দেবী চণ্ডীর মহিমা গীত। প্রাচীন গীতের এই পঙতিটি গত ৫শ বছর ধরে বাঙ্গালি সমাজে প্রবাদ-প্রবচন হিসেবে টিকে আছে। তবে বুলি হিসেবে পীপিলিকার জায়গায় উইপোকা, এবং ‘উঠে’র পরিবর্তে ‘গজায়’ শব্দের ব্যবহার হতে দেখা যায়।
পীপিলিকার জায়গায় উইপোকার ব্যবহারকে আধুনিক এবং অধিক যৌক্তিক বলে মনে হয়। কারণ উইপোকা শুনতে পায় না কারণ তাদের কান নেই। অধিকাংশ উইপোকা দেখতে পায় না, কারণ চোখ নেই। ফলে চলার জন্য তারা অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। জীবনের এক পর্যায়ে যখন তাদের পাখা গজায়। তখন তারা গর্ত ছেড়ে বাইরে বের হয়ে আসে। কিন্তু কান ও চোখ না থাকায় এবং পাখা শরীরের তুলনায় দুর্বল হওয়ায় অধিকাংশ উইপোকা আর তাদের গর্তে ফিরে যেতে পারে না। এভাবেই তাদের জীবন লীলা সাঙ্গ হয়।
প্রাচীন পঙতি এবং উইপোকার প্রসঙ্গটি মাথায় ঘুরছিল, জাতীয় সংসদ উপনির্বাচনে ভিপি নূরের অংশ নেয়ার ঘোষণায়। তার এই ঘোষণায় আমি মর্মাহত, আশাহত কিংবা অবাকও হইনি। কারণ নূর যে অদুরদর্শী এবং আদর্শহীন মানুষ এই ধারণা আমার শুরু থেকেই বদ্ধমূল। বরং আমি অবাক হয়েছি তাকে নিয়ে মহল বিশেষের আগ্রহের কারণে। নিজেকেই প্রশ্ন করেছি, কেন এই অনাহুত স্থুল আশাবাদ? কেন আমাদের নুন্যতম ইতিবাচক বিচারবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করবে না? জাতি হিসেবে আমরা সবসময় কেন হালকা মনোবৃত্তিসম্পন্ন চিন্তায় বুঁদ হয়ে থাকব? আমাদের এই সস্তা মনোবৃত্তির কারণে আর কতো সুযোগ করে দেবো সমাজের আদর্শহীন চিহ্নিত ভাঁড়দের? এসব প্রশ্নের কী জবাব ও দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছি পরবর্তী প্রজন্ম বা আমাদের সন্তানদের জন্য?
অবিভক্ত বাংলায় জন্ম হয়েছে ভারতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের। শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে আজকের বিজেপির গোড়াপত্তনও এই বাংলায়। সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভারতের স্বাধীনতা স্বপ্নের জন্মও এই বাংলা থেকেই। শুধু কি তাই, পাকিস্তান সৃষ্টির ক্ষেত্রে বর্তমান পাকিস্তান কতটা প্রস্তুত ছিলো এই প্রশ্ন করাও অমূলক হবে না। কারণ দেশভাগের এক বছর আগে ১৯৪৬ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলিম লীগ পাকিস্তানের কোনো প্রদেশে জিততে পারেনি। এমনকি তৎকালীন ভারতবর্ষের ১১ টি প্রদেশের মধ্যে মুসলিম লীগ একমাত্র অবিভক্ত বাংলায়ই জয়লাভ করেছিল। অর্থাৎ পাকিস্তান সৃষ্টির পেছনেও বাংলার ভূমিকাই ছিল মূখ্য। যে অঞ্চলের মানুষদের রাজনৈতিক বোধ এবং অতীত এতো গভীর, সেই মানুষদের রাষ্ট্রচিন্তা এবং রাষ্ট্রগঠন এমন করুণ হবে কেন? আর এই গলদের সূত্র বা সংজ্ঞা বর্তমান রাজনীতিকদের কি জানা আছে?
সাতচল্লিশের দেশভাগ হয়েছিল লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে। আর বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার ভিত্তিও ছিলো লাহোর প্রস্তাব। এই দুটি দাবিনামা, প্রস্তাব এবং বক্তব্য অভিন্ন। ৬ দফায় একটিমাত্র পৃথক দাবী যুক্ত হয়েছিল, সেটি হলো দুই প্রদেশে পৃথক মূদ্রা ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়া ফেডারেল সরকার ব্যবস্থা, কেন্দ্রের হাতে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রদেশগুলোর আলাদা বাণিজ্য ও বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন, পৃথক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইত্যাদি লাহোর প্রস্তাবেই ছিলো। অর্থাৎ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা থাকলেও, ৬ দফায় ছিলনা আকাঙ্খা পূরণের উপাদান। এজন্যই মুজিবনগর সরকার ঘোষণার প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পত্রে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যসমূহ যুক্ত করা হয়। বড় দুই দল ঘোষণা নিয়ে বিবাদ করলেও প্রকৃতপক্ষে ৭১ এর ১০ এপ্রিলই স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। যা সংবিধানেও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সেই ঘোষণায় সাম্য, সামাজিক সুবিচার ও মানবিক মর্যাদা এই তিনটি উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে। সেই ঘোষণাপত্র সংবিধানে যুক্ত করার পরও সংবিধানে গনতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র এই ৪ মূলনীতি যুক্ত করা হয়। এই ৪ মূলনীতি সাংঘর্ষিক। রাষ্ট্র গনতান্ত্রিক হলে ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টি উল্লেখের প্রয়োজনই নেই। আর সমাজতন্ত্রের সাথে গনতন্ত্রের দুরত্ব ব্যপক। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গনতন্ত্র মানে শ্রমিক শ্রেণীর গনতন্ত্র। আবার জাতীয়তাবাদের সাথে গনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের আদর্শিক দুরত্ব যোজন যোজন।
অর্থাৎ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সাথে সংবিধানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের বোধের ফারাক ছিল স্পষ্ট। তার মানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হলেও দলটির আদর্শিক ভিত্তি স্পষ্ট ছিলো না। ফলে রাষ্ট্রের আদর্শিক ভিত্তিও ছিলো অস্পষ্ট। এই অস্পষ্টতার কারণ, রাজনীতির তৎকালীন নেতৃত্ব শুধু শাসকের পরিবর্তনের ইস্যুটিকে যতটা গুরুত্ব দিয়েছে, রাজনীতির আদর্শিক ভিত্তিকে ততই দূরে রেখেছে। অর্থাৎ দল ও রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালা নিয়ে দলে মতামত প্রকাশের চর্চা হয়েছিল কিনা আওয়ামী লীগের প্রচারণা ও প্রকাশনায় বিষয়টি স্পষ্ট নয়। দলে যদি গনতন্ত্রের চর্চা থাকতো তাহলে কোন পরিস্থিতিতে দলের ভেতরে ৭৫ এর ১৫ আগস্টের মত একটি হিংসাত্মক নৃশংস ঘটনার জন্ম হয়েছে সেটা স্পষ্ট হতো। আওয়ামী লীগের প্রচারণা বলছে দলটি এমন একটি হিংসাত্মক ঘটনার পূর্বানুমান করতে পারে নি। অথচ বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভার ২৩ সদস্য খুনি মোস্তাকের মন্ত্রীসভায় যোগ দিয়েছে!!
এসব প্রশ্ন কি এদেশের মানুষের মনে উকি দেয়? না-কি স্বাধীনতার ঘোষণার মতো দুই রাজবংশ যা বলবে সেটাই অন্ধের মতো বিশ্বাস করে যাবে। এদেশের মানুষের এই মিথ্যা ও অন্ধ বিশ্বাস দেশকে সঠিক নির্দেশনায় পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্তরায়। পড়াশোনা জানা মানুষজনও সংবিধানে সংযুক্ত সত্যকে চোখ বুলিয়ে দেখে না। আর দুই দল প্রতিনিয়ত মিথ্যা প্রচার করে সংবিধান লঙ্ঘন করছে। যদি ৭ মার্চের ঘোষণা বা কালুরঘাটের ঘোষণা সত্য হয় তাহলে সংবিধান কি মিথ্যা? সংবিধান যদি মিথ্যা হয় তাহলে বাংলাদেশের সাংবিধানিক অস্তিত্ব কি থাকে?
একটি গনতান্ত্রিক দেশ ও সমাজ বিনির্মানের পক্ষে এতদঞ্চলের মানুষের আশাবাদ শুরু হয়েছিল ১৮৫৭ সালে মীরাট ও দিল্লিসহ ভারতে সিপাহী বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে। এরপর গত ১৬৩ বছরে মানচিত্রে নানা পরিবর্তন হয়েছে। শঙ্কর বাঙ্গালীরা ধর্মজাতির নামে নিজেদের বিভক্ত করেছে। সেই ধর্মরাষ্ট্রও মানুষকে শোষণ, নিপীড়ন, খুন, ধর্ষণ করেছে ধর্মের নামে। এরপর স্বাধীন এই বাংলাদেশ। আমরা জানি আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজে রয়েছে হাজারো অসঙ্গতি ও অসামঞ্জস্যতা। ১৬৩ বছরেও এদেশের মানুষের গনতন্ত্রের আশাবাদ অধরা রয়ে গেছে। এদেশের মানুষ ফিরিঙ্গীদের নির্যাতন লুটপাট দেখেছে। পাকিস্তানিদের লুটতরাজ শোষণ নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে অস্ত্র হাতে নিয়ে জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। কিন্তু স্বজাতির শাসকদের ধারাবাহিক লুটপাট ও অপশাসনে বর্তমান প্রজন্ম বীতশ্রদ্ধ। অথচ আস্থা নেই বলে, কোনো নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে মানুষ এখন রাস্তায় নামছে না। মানুষ কেবলমাত্র অপেক্ষায় থাকে লুটেরাদের সরানোর সুযোগের।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নূরুল হক নূরুর সাফল্য, দাবীটির গ্রহনযোগ্যতার কারণে। সেই আন্দোলনে ছাত্রলীগ কয়েকদফা হামলা চালিয়ে ছাত্রসমাজের চক্ষুশূল হয়েছিলো। নূর’কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি নির্বাচিত করে ছাত্ররা তার জবাব দিয়েছে। কিন্তু সেই প্রেক্ষাপটকে পুঁজি করে তড়িঘড়ি করে দল তৈরির ঘোষণা এবং উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা উইপোকার পাখা গজানোর সামিল। নূরের উচিত ছিল একটি ছাত্র-গনতান্ত্রিক আন্দোলন সংগঠিত করে ব্যপক মানুষের আস্থা অর্জনের পথ তৈরী করা। এতে তিনি কিছু মানুষের আস্থার প্রতিনিধি হলেও হতে পারতেন। একটা অসংগঠিত আন্দোলনের সাফল্য পেয়ে, অন্য সকল অসংগঠিত পথকেই মসৃণ ভেবে নেয়া, রাজনীতির ক্ষেত্রে অনেক বড়ো বোকামি। নূর সত্যিই এই বোকামি করে বসলে এটা তার জন্য হবে আত্মহননের সামিল।

নাছির উদ্দিনঃ

পাঠক, লেখক, বিশিষ্ট সাংবাদিক


কুমিল্লা টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

বিজ্ঞাপন

সকল স্বত্বঃ কুমিল্লা টাইমস কতৃক সংরক্ষিত

Site Customized By NewsTech.Com