ফয়সাল মবিন পলাশঃ
কুমিল্লায় তিশা প্লাস নামে যাত্রীবাহী বাসে এক তরুণীকে আটকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃত বাস চালক আরিফ হোসেন সোহেল কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার নেউরা গ্রামের শরীফ হোসেনের ছেলে ও হেলপার বাবু শেখ ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কামিনারবাগ গ্রামের শেখ ওয়াজেদের ছেলে। তারা দু’জনই সদর দক্ষিণ থানার নোয়াবাড়ি (পদুয়ার বাজার) ও মধ্যম আশ্রাফপুর এলাকায় বসবাস করে। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ধর্ষিত তরুণীর চিকিৎসা, ডাক্তারী পরীক্ষা ও আদালতে জবানবন্দী প্রদানের পর বুধবার রাতে তাকে তার মায়ের হেফাজতে দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিষয়টি জানাজানি হলে নগরজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
তরুণীর পরিবার ও মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ওই তরুণী শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকার আবদুল্লাহপুরে তার জেঠাতো বোনের বাসায় যান। সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাড়ি ফেরার উদ্দেশে জেঠাতো বোনের বাসা থেকে বের হন। সেখান থেকে ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে পৌঁছেন।
ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ‘তিশা প্লাস’ পরিবহনের একটি বাসযোগে কুমিল্লা শহরের শাসনগাছার উদ্দেশে রওনা হন ওই তরুণী। পথে বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে শাসনগাছা বাস স্টেশনে পৌঁছার পর তাকে নামিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে রাখেন। এতে তারা তাকে সেখানে নামিয়ে দেবে এবং এ বিষয়ে টেনশন করতে নিষেধ করে। কিন্তু বাসের চালক ওই তরুণীকে শাসনগাছা বাস স্টেশনে না নামিয়ে কৌশলে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় নিয়ে যায়।
মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল, হেলপার বাবু শেখ ও সুপারভাইজার আলম বাসটির দরজা-জানালা বন্ধ করে তরুণীকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল বাস থেকে নেমে চলে যায়। এরপর হেলপার বাবু শেখ ও সুপারভাইজার আলম তরুণীকে বাস থেকে নামিয়ে পদুয়ার বাজার এলাকায় বাবু শেখের ঘরে নিয়ে পুনরায় ধর্ষণ করে। সকাল ৬টার দিকে তরুণীকে অসুস্থ অবস্থায় ঘর থেকে বের করে দিয়ে চলে যেতে বলে। পরে তরুণী মোবাইল ফোনে তার মাকে ঘটনা জানান।
মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে তরুণীর মা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় পৌঁছে ঘটনার বিস্তারিত জেনে অভিযুক্তদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করেন। এরপর তিনি বাদী হয়ে ওইদিন রাতে তিনজনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় গণধর্ষণের মামলা করেন।
ওই তরুণীর মা জানান, তার মেয়ে গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। করোনার কারণে তিনি ৫ মাস আগে বাড়ি চলে আসেন। গত শুক্রবার চাকরির সন্ধানে বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়ে জেঠাতো বোনের বাসায় ওঠেন। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে এমন নিষ্ঠুর ঘটনার শিকার হন। তিনি তার মেয়ের ওপর পাশবিক নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘তিশা প্লাস’ পরিবহনের পরিচালক বিমল দে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেই বাসটিতে ঘটনা ঘটেছে সেই বাসটির মালিক এই পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দুলাল হোসেন অপু। তবে এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে আমরা তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
এদিকে তিশা প্লাস পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ওই গাড়ির মালিক দুলাল হোসেন অপু বলেন, ঘটনার পর আমরা তিশা প্লাস গাড়ির (ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৩৯৮) চালক ও হেলপারসহ দুই আসামিকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর দক্ষিণ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কমলকৃষ্ণ ধর বৃহস্পতিবার রাতে জানান, মামলার পর পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে চালক বাবু শেখ ও হেলপার আরিফ হোসেন সোহেলকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো করা হয়।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার আদালতে উভয়ের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া ওই তরুণীর ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে এবং সে আদালতে ঘটনার বিবরণ জানিয়ে জবানবন্দি দিয়েছে। মামলার অপর আসামি আলমকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সদর দক্ষিণ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কমল কৃষ্ণ ধর বৃহস্পতিবার জানান, মামলা দায়েরের পর পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাবু শেখ ও আরিফ হোসেন সোহেলকে গ্রেফতার করে রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া মামলার ভিকটিম ওই তরুণীর ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি আদালতে ঘটনার বিবরণ জানিয়ে জবানবন্দী দিয়েছেন। মামলার অপর আসামি আলমকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।