বিজ্ঞপ্তি:
"কুমিল্লা টাইমস টিভিতে" আপনার প্রতিষ্ঠান অথবা নির্বাচনী প্রচারনার জন্য এখনি যোগাযোগ করুন : ০১৬২২৩৮৮৫৪০ এই নম্বরে
শিরোনাম:
মুরাদনগরে স্বপ্নের ঠিকানা নতুন ঘর পেলো ১১৫টি পরিবার মুরাদনগরে এমপির অর্থায়নে ইফতার সামগ্রী বিতরণ কুমিল্লায় অতিরিক্ত মূল্য ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রির দায়ে পাঁচ প্রতিষ্ঠান‌কে জ‌রিমানা কুমিল্লায় ফুড ব্যাংক ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে ৫ টাকায় রমজানের ইফতার মৈত্রী পাইপলাইন দুই দেশের জন্যই মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান যাচাই করে জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে – শিক্ষামন্ত্রী মুরাদনগরে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস পালিত মুরাদনগরে ‘কৃষক হত্যা’ দিবস পালিত ঢাকাস্থ মুরাদনগর ছাত্রকল্যাণ পরিষদের নতুন কমিটি ঘোষণা আগামীকাল মুরাদনগরে আসছেন শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি মুরাদনগরে দেশ রূপান্তর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত এমপিও ভুক্ত শিক্ষা জাতিকরণে মুরাদনগরে কর্মবিরতি পালন মুরাদনগরে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে জমির মাটি কাটায় বাধা, সন্ত্রাসী হামলার শিকার সোহাগ বাঙ্গরা বাজার থানায় ১৫ কেজি গাঁজা সহ যুবক আটক মুরাদনগরে ইটভাটায় ডাকাতি, দুই সদস্য আটক

১৪ দিনে দুইশো মুমূর্ষু রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তুলেছেন ডাঃ আহমেদ জোবায়ের

  • আপডেটের সময় : সোমবার, ৯ আগস্ট, ২০২১
  • ৫৭০ বার পড়া হয়েছে
১৪ দিনে দুইশো মুমূর্ষু রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তুলেছেন ডাঃ আহমেদ জোবায়ের

স্টাফ রিপোর্টার:

করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ বিস্তারে কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলায় যখন শুরু হয় মৃত্যুর মিছিল, মানুষ সরকারি হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে গিয়ে যখন পাচ্ছিলেন না সীট ও অক্সিজেন, এম্বুলেন্স ও গাড়িতে ঘুরে ঘুরে যখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছিলো রোগীরা,তখন বরুড়া উপজেলার আড্ডা,আদ্রা ও ঝলম ইউনিয়ন তথা বরুড়াবাসীর জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেন আড্ডা ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের ডাঃ আহমেদ জোবায়ের। তিনি সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে ২০০৯ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন।

ডাঃ আহমেদ জোবায়ের দীর্ঘ ৮ বছর সিলেটের বিয়ানীবাজারে ডাঃ জোবায়ের মেডিকেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে এক লাখের বেশি রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছিলেন। গত বছর আগস্টের ১০ তারিখে তিনি নিজ এলাকার মানুষের কথা বিবেচনা করে স্থানীয় আড্ডা বাজার কলেজ রোডে অবস্থিত হাজী ইয়াসিন সুপার মার্কেটে ডাঃ জোবায়ের মেডিকেয়ার এন্ড প্যাথলজি সেন্টারের মাধ্যমে মানুষকে আউটডোর সেবা দিয়ে আসছিলেন। চারদিকে চিকিৎসা না পেয়ে মানুষের মাঝে যখন হাহাকার বিরাজ করছিলো,তখন সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজ জীবন ঝুঁকিতে ফেলে এলাকার মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুভব করে তিনি চালু করেন কোভিড ইউনিট। ইতিমধ্যে পুরো বরুড়া উপজেলায় যা ব্যাপক সাড়া ফেলে। চারদিকে ডাঃ জোবায়ের এর প্রশংসা শুনা যাচ্ছে। বাংলাদেশের কোথাও ইউনিয়ন লেভেলে কোভিড ইউনিট এর কথা কল্পনাও করা যায়না। কিন্ত সেই অকল্পনীয় অসাধ্য সাধন করে চিকিৎসাপ্রার্থী মানুষের প্রিয় চিকিৎসক হয়ে উঠেছেন গরীবের ডাক্তার খ্যাত এই মানুষটি।

সরেজমিনে ডাঃ জোবায়ের মেডিকেয়ার সেন্টারে গিয়ে দেখা যায় সব সীট ফিল আপ। কোন বেড খালি নেই। এডমিট হতে ইচ্ছুক রোগীদের বুঝিয়ে বিদায় করার চেষ্টা করছেন ডাঃ জোবায়ের। মাত্র ১৫ বেড নিয়ে পুরো ইউনিয়নের মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছেনা তার পক্ষে। রোগী ও তাদের স্বজনরা মুক্তির লড়াইকে বলেন, ডাঃ জোবায়ের গত দুই সপ্তাহ দিনরাত নাওয়া খাওয়া ভুলে কোন বিশ্রাম না নিয়ে শুধু মানুষের জীবন বাঁচাতে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা আল্লাহ এর কাছে দোয়া করি। এমন ডাক্তার আমরা চোখে দেখিনি কখনো,যে কিনা রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে লড়াই করে যাচ্ছেন অবিরত। ছোট তুলাগাঁও নিবাসী কোভিড নিউমোনিয়া আক্রান্ত বজলুর রহমান জানান, যখন আমি এখানে আসি চিকিৎসা নিতে, তখন আমার অক্সিজেন এর মাত্রা ছিলো ৬২%। আমার প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো। আমার ছোটভাই ঢাকায় চেষ্টা করেও সীট পায়নি।

এখানে আসার সাথে সাথেই ডাক্তার দ্রুত চিকিৎসা দেন। দিনরাত তিনি আমার সেবা করেন। একটু অবহেলা করেননি, বিরক্তও হননি। আলহামদুলিল্লাহ আমি এখানে এসে সঠিক চিকিৎসা পেয়ে এখন সুস্থ হয়ে উঠছি। আর এক দুইদিন পর বাড়ি ফিরতে পারবো আশা রাখি। তিনি যখন ডাঃ জোবায়ের এর কথা বলছিলেন, তখন তিনি অশ্রুসিক্ত ছিলেন।
একজন ডাঃ আহমেদ জোবায়ের শুধুমাত্র মানুষের জীবনকে গুরুত্ব দিয়ে এই বিশাল চিকিৎসার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন।

তিনি আরও বলেন, অক্সিজেন ম্যানেজ করা নিয়ে তার যুদ্ধ। কুমিল্লায় অক্সিজেন এখন সিন্ডিকেটের দখলে। যেই সিলিন্ডার আগে ২০/২২ হাজার টাকায় কেনা যেতো, সেগুলো তিনি কিনেছেন ৩৮হাজার ৫০০ টাকায়। যেই রিফিল ৯০ লিটারের সিলিন্ডার জন্য ৯৮০ টাকা ছিলো, তা রিফিল করে আড্ডা আনতে উনার খরচ পড়ে ৩হাজার ১০০ টাকা। একজন মুমূর্ষু রোগীকে হাইফ্লো অক্সিজেন নন-রিব্রেদিং মাস্ক দিয়ে দিলে ৬ ঘন্টায় একটা ৯০ লিটারের অক্সিজেন সিলিন্ডার খালি হয়ে যায়। প্রতিদিন উনাদের ৫০ হাজারের বেশি টাকার অক্সিজেন কেনা লাগে।

চিকিৎসা নিয়ে কথা বলতে গেলে ডাঃ আহমেদ জোবায়ের বলেন, কোভিড নিউমোনিয়ার চিকিৎসা ব্যয়বহুল তার কারণ এই রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত মেডিসিন গুলো খুব দামী। তিনি আমাদের জানান, ৭ দিনের ফুল কোর্স রেমডিসিভির, মেরোপেনাম, মক্সিফ্লক্সাসিন, মিথাইল প্রেডনিসোলোন, এনক্সাপেরিন দাম প্রায় ৬০ হাজারের উপর আসে। তারপর রোগীদের বিভিন্ন টেস্ট করা লাগে। একটা HRCT Chest, ডি ডাইমার ফেরিটিন, প্রোক্যালসিটোনিন টেস্ট করতেই মানুষের সাড়ে এগারো হাজার টাকা লাগে।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ ডাঃ জোবায়ের এসকিউ ফাউন্ডেশনের ফ্রি অক্সিজেন নিয়ে সেই অক্সিজেন রোগীদের কাছে বিক্রি করেছেন।

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি, সিসিটিভির ফুটেজ ও এডমিশন ফরমে দেখা দেখিয়ে বলেন, বেওলাইন গ্রামের জয়ধরের নেশা ডাঃ জোবায়ের মেডিকেয়ার সেন্টারে চিকিৎসা নিতে আসেন দুপুর ১২টা বিশ মিনিটে। কিন্ত সেইদিন রাতে লাইভে এসে ইমারজেন্সি অক্সিজেন চেয়ে ইউএনও বরুড়ার দৃষ্টি আর্কষণ করলে তিনি এসকিউ ফাউন্ডেশন থেকে দশটা সিলিন্ডার এর অক্সিজেন ধার দেন আমাদেরকে। আমরা কোন ফ্রি অক্সিজেন নেইনি। সেসব সিলিন্ডার রিফিল হয়ে আসলে ফেরত দেওয়া হয়। একটা কুচক্রী মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে মিথ্যাচার করে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলে কোভিড ইউনিট বন্ধ করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। যার বিভিন্ন প্রমাণ তিনি দেখান।

ডাঃ জোবায়ের মেডিকেয়ার এন্ড প্যাথলজি সেন্টারের অনুমোদন না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষের জীবন বাঁচানো বড় না অনুমোদন? আমি কোভিড চিকিৎসায় একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। আমি আমার চিকিৎসা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নিয়ে মানুষ যখন বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছিলো,তখন তাড়াহুড়ো করে কোভিড ইউনিট চালু করি। ইতিমধ্যে অনুমোদন নেওয়ার সব প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অচিরেই প্রতিষ্ঠানটি লাইসেন্স পেয়ে যাবে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

স্থানীয় এমপি নাসিমুল আলম চৌধুরী নজরুলের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, আড্ডাস্থ ডাঃ জোবায়ের মেডিকেয়ার সেন্টার কোভিড ইউনিট এর ব্যাপারে তিনি ওয়াকিবহাল আছেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আড্ডা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বাদল কে পাঠিয়ে সেখানে মানুষ কেমন চিকিৎসা পাচ্ছেন তার খোঁজ খবর নেন। তিনি যথেষ্ট পজেটিভ রিপোর্ট পেয়েছেন বলে জানান। তিনি ডাঃ আহমেদ জোবায়েরকে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও আমাদের জানান।

গত ১৪ দিনের রেজিস্টার চেক করে আমরা দেখি, প্রায় দুশোর বেশি মুমূর্ষু রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন ডাঃ জোবায়ের। এরমধ্যে দুইজন অন্যত্র নেওয়ার পথে মারা যান। তিনজন রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় এখানে মারা যান। ডাঃ জোবায়ের দাবী করেছেন, রোগী ও তাদের স্বজনরা যারা উনাকে কো-অপারেট করেছেন চিকিৎসায়,তাদের রিকোভারি খুবই আশাপ্রদ। ডাঃ জোবায়ের মেডিকেয়ার সেন্টার কোভিড ইউনিট এর সহযোগিতায় ইতিমধ্যে এগিয়ে এসেছেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক ড.মো দেলোয়ার হোসেন, মানিকগঞ্জের জেলা জজ আমজাদ হোসেন, মনোহরপুর নিবাসী বিশিষ্ট দানবীর ও সমাজ সেবক আলহাজ্ব নুরুল হক মুন্সী, ছোট তুলাগাঁও নিবাসী মোতাহার হোসেন মোল্লা, কাতার প্রবাসী ও সমাজ সেবক, পশ্চিম আড্ডা নিবাসী ডাঃ জোবায়ের এর বন্ধু আমান উল্লাহ, রিয়াদ ইউনিভার্সিটির ফিজিক্সের প্রফেসর ড. ইমাম হোসেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক দম্পতি, ব্যাংক এশিয়া আড্ডা বাজার আউটলেটের পরিচালক শাহ আলম, ময়নামতি মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন এর অধ্যাপক ডাঃ বাসুদেব দাস, পশ্চিম আড্ডা মিয়াজি বাড়ির সোহেল মিয়াজি সহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তি। ডাঃ আহমেদ জোবায়ের সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন,সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ যদি আমাকে সাপোর্ট না দেয়,তবে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উদ্যোগে এমন ব্যয়বহুল কোভিড ইউনিট চালানো মুসকিল হয়ে পড়বে।

তিনি কুমিল্লা টাইমসকে নিশ্চিত করেন, কোন বিজনেস ইন্টারেস্ট থেকে নয়, শুধুমাত্র বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু-পথযাত্রী মানুষকে বাঁচাতে তিনি এমন ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন।

উল্লেখ্য ডাঃ আহমেদ জোবায়ের বরুড়া উপজেলার স্বনামধন্য দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোয়ালিয়া বাতেনিয়া সিনিয়র ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মরহুম মাওলানা আব্দুল মান্নান ওয়াজেদী হুজুরের মেজো পুত্র মাস্টার মোঃ নুরুল আমিন ও বেগম নাজিয়া আমিনের জোষ্ঠ্য পুত্র। ডাঃ আহমেদ জোবায়ের এর স্ত্রী ডাঃ নাবিলা বিনতে আলী তমা ও উনাদের দুই শিশু কন্যা জুনাইরাহ ও জাহাবিয়া যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় আম্মাপাখি নামে অধিক পরিচিত।


কুমিল্লা টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

বিজ্ঞাপন

সকল স্বত্বঃ কুমিল্লা টাইমস কতৃক সংরক্ষিত

Site Customized By NewsTech.Com