সাজ্জাদ হোসেন শিমুলঃ
হ্যান্ড স্যানিটাইজারের আগুনে দগ্ধ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিএসএমএমইউ’র নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক রাজীব ভট্টাচার্য আর নেই। তিনি ৮৭% দগ্ধ শরীরের যন্ত্রণা নিয়ে এক সপ্তাহ যুদ্ধ করে অবশেষে মঙ্গলবার (২৮জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাষ্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন।
তার মরদেহ নিজ গ্রামের বাড়িতে এনেই সৎকার সম্পন্ন করা হবে বলে ডাঃ রাজীবের বড়বোন মনিদীপা ভট্টাচার্য মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন। মঙ্গলবার পৌনে ৩টায় মোবাইল ফোনে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ২টা ৩০মিনিটে তার বাবার সাথে কথা হয়েছে। তখন রাজীবের মরদেহ নিয়ে এ্যাম্বুলেন্স যোগে রওয়ানা দিয়েছেন। আসার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ বাড়িতে সৎকার করা হবে। তিনি রাজীবের স্ত্রী ডাঃ অনুসূয়া ভট্টাচার্য সম্পর্কে জানান, তিনি হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন আছেন। রাজিবের মরদেহ নিয়ে তার বাবা, বোন, বোন জামাই ঢাকা থেকে আসছেন।
অগ্নিদগ্ধের ঘটনাটি ঘটে গত ২১ জুলাই মঙ্গলবার রাত অনুমান ১টায় রাজধানীর হাতিরপুল ইষ্টার্ন প্লাজার পেছনের বাড়ির তৃতীয় তলার ভাড়া বাসায়। ওই দিন রাতে বাসায় রাজিব একটি বড় বোতল থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ছোট বোতলে ঢালছিলেন। তখন বোতল থেকে স্যানিটাইজার পড়ে গেলে মুখে সিগারেট অথবা মশার কয়েলের আগুনের সংস্পর্শে তার শরীরে আগুন ধরে যায়। তা দেখে তার স্ত্রী ডাঃ অনুসূয়া সম্ভবত তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে তিনিও দগ্ধ হন। তবে অন্য কোনভাবে দগ্ধের ঘটনা হয়েছে কিনা তা এখনো জানা যায়নি। পরে তাদের চিৎকারে আশপাশের ভাড়াটিয়ারা তাদের উদ্ধার করে রাতেই শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিটিউটে ভর্তি করেন।
ওই ডাক্তার দম্পতি, ডাঃ রাজীব ভট্টাচার্য (৩৬) ও ডাঃ অনুসূয়া ভট্টাচার্য (৩২) কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ইষ্টগ্রামের অধিবাসী। অগ্নিদগ্ধ ডাঃ রাজিব ভট্টাচার্য কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার বড়শালঘর ইউনিয়নের ইষ্টগ্রামের প্রবীণ শিক্ষক লক্ষণ ভট্টাচার্যের পুত্র এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)’র নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক। তার স্ত্রী ডাঃ অনূসূয়া ভট্টাচার্য শ্যামলী সেন্ট্রাল মেডিকেল চক্ষু বিভাগের রেজিস্ট্রার। তার দেশের বাড়ি সিলেট জেলায়।
তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রাজীবের শ্বাসনালী সহ শরীরের ৮৭ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তার স্ত্রী অনুসূয়ার ২০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। ডাঃ অনুসূয়ার অবস্থাও গুরুতর। পূর্বে এক সাক্ষাৎকারে ডাঃ রাজীবের কাকাতো বোন তপু ভট্টচার্য জানিয়েছিলেন, ঢাকার বাসায় তারা স্বামী-স্ত্রী ও মেয়ে রাজশ্রী ভট্টাচার্য এবং রাজীবের বাবা অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ স্কুল শিক্ষক লক্ষèন ভট্টাচার্য থাকেন। তাদের মেয়ে রাজশ্রী ভট্টাচার্যকে ৩ সপ্তাহ আগে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ১নং বড়শালঘর ইউনিয়নের ইষ্টগ্রাম নিজ বাড়িতে দাদীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ডাঃ রাজীব এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে রাজীব সবার ছোট এবং ছাত্র জীবনে রাজীব খুবই মেধাবী ছিলেন।
তিনি আরও জানান, ৬ বছর আগে সিলেট মেডিকেল কলেজে পড়া অবস্থায় প্রেমের সম্পর্কে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগে ছিল। এটি শুধু একটি দুর্ঘটনা বলে আমাদের মনে হচ্ছে না। অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে বলে আমাদের ধারণা।
স্থানীয়রা জানান, রাজীব ভট্টাচার্য অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তার বাবা বড়শালঘর ইউএমই উচ্চবিদ্যালয়ের বিএসসি শিক্ষক ছিলেন, বর্তমানে অবসরে আছেন। তার ১ছেলে ও মেয়েও অত্যন্ত মেধাবী এবং সকলের প্রিয় ছিলেন। রাজীব মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুর আব্দুল মজিদ কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন এবং সিলেট মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারী পাশ করেছেন।