অনলাইন ডেস্কঃ
স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার বিষক্রিয়ায় আমেরিকার পাঁচ শতাধিক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪টি স্টেটে ছড়িয়ে পড়া এই ব্যাকটেরিয়ার সাথে ক্যালিফোর্নিয়ায় উৎপাদিত লাল পেঁয়াজের যোগসূত্র পেয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) জানায়, ক্যালিফোর্নিয়ার বেকার্সফিল্ড-ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান থমসন ইন্টারন্যাশনাল, ইনক. এই ব্যাকটেরিয়াপূর্ণ পেঁয়াজের উৎস বলেই মনে হচ্ছে। তারা পেঁয়াজের চাষ এবং বিপণনের সাথে জড়িত।
গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে এফডিএ জানায়, যদিও অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে এই ব্যাকটেরিয়ার প্রাদুর্ভাবের পেছনে লাল পেঁয়াজই উৎস, তবুও এফডিএ সব ধরনের পেঁয়াজ পরীক্ষা করে দেখবে। কারণ, অন্য প্রজাতির পেঁয়াজও এসব লাল পেঁয়াজের সংস্পর্শে থেকে আক্রান্ত হতে পারে।
থমসন ইন্টারন্যাশনাল জানায়, তারা ক্যালিফোর্নিয়ায় এই পেঁয়াজের চাষ করে। তাদের লাল, সাদা, হলুদ এবং মিষ্টি পেঁয়াজ পরীক্ষা করবে এফডিএ। তারা এই পেঁয়াজগুলো পাইকারী বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করেছে। এসব পেঁয়াজ আমেরিকার বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও কানাডাতেও পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও টিআইআই প্রিমিয়াম, এল কম্পিটিটর, হার্টলে, অনিয়ন্স ৫২, ইম্পেরিয়ার ফ্রেশ, ইউতাহ অনিয়ন্স এবং ফুড লায়ন নামে জালি ব্যাগ এবং কার্টনে করে এসব পেঁয়াজ সরবরাহ করেছে তারা।
আমেরিকার সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানায়, স্যালমোনেলার আক্রমণে পাঁচ শতাধিক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে ৭৫ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এদের মধ্যে ওরিগনে ৭১ জন, ইউতাহয় ৬১ জন এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় ৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। প্রথম আক্রান্তের রিপোর্ট হয়ে জুনের ১৯ থেকে জুলাইয়ের ১১ তারিখের মধ্যে।
তবে এই অসুস্থতার পেছনে আরো কোনো কারণ রয়েছে কিনা তা অনুসন্ধানে খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে এফডিএ। আমেরিকায় স্যালমোনেলার মতোই জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্টের সন্ধান মিলেছে কানাডাতে।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, প্রত্যেকের বাড়িতে যে পেঁয়াজ আছে কিংবা পেঁয়াজের তৈরি খাবার রয়েছে তা ফেলে দেয়া উচিত। বিশেষ করে থমসন কম্পানির উৎপাদিত পেঁয়াজ যারা কিনেছেন সেগুলো অবশ্যই ফেলা দেয়া দরকার। অথবা ঘরে কেনা পেঁয়াজ কোত্থেকে এসেছে তা না জানলেও নিরাপত্তার খাতিরে ফেলে দেয়া উচিত।
এই ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে স্যালমোনেলোসিসে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। ৪-৭ দিন অসুস্থতা থাকতে পারে বলে জানান কর্মকর্তারা। দুর্বল রোগপ্রতিরোধী ক্ষমতা রয়েছে এমন শিশু বা বয়স্করা মারাত্মক অসুস্থ হতে পারেন। লক্ষণের মধ্যে রয়ছে ডায়রিয়া, জ্বর এবং পেটে ব্যথা। গুরুতর অসুস্থদের মধ্যে খুব বেশি জ্বর, মাথাব্যথা কিংবা দেহে র্যাশও উঠতে পারে।
পশু থেকেও মানুষের মাঝে ছড়াতে পারে স্যালমোনেলা। খাবারে পাত্র এবং হাত অপরিষ্কার থাকলে এবং কাঁচা বা আধাসেদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে স্যালমোনেলায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সেন্ট্রারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানিয়েছে, স্যালমোনেলার কারণে আমেরিকায় প্রতিবছর ১.৩৫ মিলিয়ন মানুষ অসুস্থ হচ্ছেন এবং ২৬ হাজার ৫০০ জন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। যদিও অধিকাংশই কোনো চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হচ্ছেন। তবে আমেরিকায় প্রতিবছর চার শতাধিক মানুষের মৃত্যুর নেপথ্যে মারাত্মক অবস্থার স্যালমোনেলসিসকে দায়ী করা হয়।
সিডিসি জানায়, এ বছরই মুরগি এবং হাঁস থেকে ছড়ানো স্যালমোনেলার কারণে এক হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়েন। কমপক্ষে ১৫১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। ওকলাহামায়ে একজন মারাও গেছেন। ওই সময় যারা অসুস্থ হয়েছিলেন তাদের এক-চতুর্থাংশের বয়স ৫ বছরের কম।
গত বছরেও আমেরিকার ১৪টি অঙ্গরাজ্যে ১৫৬ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন স্যালমোনেলার কারণে। তখন এটা ছড়ায় আগে থাকে কেটে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা বিভিন্ন ধরনের ফল থেকে। এর মধ্যে রয়েছে হানিডিউ মেলন, ফুটি, আনারস এবং আঙ্গুর থেকে।
এবার স্যালমোনেলায় অসুস্থ হওয়ার খবর এসেছে অ্যারিজোনা, ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, ফ্লোরিডা, ইন্ডিয়ানা, ইলিনয়েস, আইডাহো, লোয়া, কানসাস, কেন্টাকি, মেইনে, ম্যারিল্যান্ড, মিনেসোটা, মিসৌরি, মন্টানা, নেবরাস্কা, নেভাদা, নিউ ইয়র্ক, নর্থ ক্যারোলিনা, নর্থ ডাকোটা, ওহিও, অরিগন, পেনসিলভেনিয়া, সাউথ ক্যারোলিনা, টেনেসি, টেক্সাস, ইউতাহ, ভার্জিনিয়া, উইসকনসিন এবং ওয়াইমিং থেকে।
সূত্রঃ নিউইউর্ক টাইমস