সাংস্কৃতিব ব্যক্তিত্ব ও বরেণ্য অভিনেতা আলী যাকের মারা গেছেন। শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
এর আগে গত ১৭ নভেম্বর কার্ডিয়াক জটিলতা নিয়ে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পরে পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) উপস্থিতি পাওয়া যায়।
আলী যাকেরের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে ছেলে ইরেশ যাকের ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেন, ‘চার বছর ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধের পর বাবা আজকে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে চলে গেল। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন। উনি যে-ই দোয়া এবং ভালোবাসা পেয়েছেন তার জন্য আমরা হৃদয়ের গভীর থেকে কৃতজ্ঞ।’
তিনি জানান, তার বাবার জানাজা আজ বাদ আসর বনানী গোরস্থান মসজিদে পড়ানো হবে।
১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের রতনপুর ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন আলী যাকের। ১৯৬০ সালে সেন্ট গ্রেগরিজ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন তিনি। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন আলী যাকের।
১৯৭২ সালের আরণ্যক নাট্যদলের “কবর” নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু করেন আলী জাকের। পরবর্তীতে “বহুব্রীহি”, “আজ রবিবার”সহ বহু নাটকে জনপ্রিয় নাটকে দর্শকের হৃদয় ছুঁয়েছেন তিনি। মঞ্চেও আলী যাকের এক জাদরেল অভিনেতার নাম। লালসালু, নদীর নাম মধুমতিসহ কয়েকটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি।
আলী যাকের নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির পূর্ণ সদস্য। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার আলী যাকেরকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা।
দেশীয় বিজ্ঞাপনশিল্পের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন আলী যাকের। স্ত্রী স্বনামধন্য অভিনয়শিল্পী সারা যাকেরকে নিয়ে গড়ে তোলেন দেশের বৃহৎ বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি, যার চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
ছেলে অভিনেতা ইরেশ যাকের, ছেলের স্ত্রী মিম রশিদ, নাতনি নেহা ও মেয়ে শ্রিয়া সর্বজয়াকে নিয়ে ছিল তার সংসার।