জীবন ফুরিয়ে যায় জীবনের স্মৃতি সব থেকে যায় তেমনই আমাদের বয়স ফুরিয়ে যাচ্ছে বাড়ছে আফসোস সাথে বাড়ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটিও। আর স্মৃতি হিসেবে থেকে যাচ্ছে একরাশ হতাশা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে প্রায় ১৮ মাস। পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম দীর্ঘ দিন যাবত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘটনা এটি। এর আগে আমেরিকায় প্লেগ রোগের কারনেও বন্ধ ছিলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা চিন্তা করছে সরকার। শিক্ষাব্যবস্থায় করোনার প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষার্থী।তাঁদের কথা তুলে ধরেছেন রাকিবুল হাসান।
সময়টা এত দীর্ঘ হবে এই প্রত্যাশা কারোরই ছিলোনা।
যখন সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে প্রতিটি স্তরের শিক্ষার্থীরা ছিলো দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ,সমগ্র বিশ্বের সামনে নিজের দেশকে তুলে ধরার জন্য করছিল আপ্রাণ চেষ্টা, ঠিক তখনই করোনার প্রবল থাবায় যেন সব থমকে গিয়েছিলো। সময়টা এত দীর্ঘ হবে এই প্রত্যাশা কারোরই ছিলোনা। তবে এই দীর্ঘকালীন থমকে যাওয়া পৃথিবীতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার প্রতি হয়েছে উদাসীন অন্যদিকে অনেকর মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে পড়ালেখার প্রতি অনীহা। এমনকি একটি বড় সংখ্যক শিক্ষার্থীদের অংশ হয়তো আর ফিরবেই না শিক্ষা জীবনে। তবে বর্তমানে সব কিছু ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। হয়তো খুব শীগ্রই আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মুখরিত হবে শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। কিন্তু দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুললেই যে সব আগের মত হয়ে পড়বে তা নিশ্চিত করা একটু মুশকিল। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান শিক্ষা ব্যবস্থার এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনলাইন ক্লাস চালু করলেও প্রায় অসংখ্য শিক্ষার্থী বিভিন্ন সমস্যার জন্য এই ক্লাসগুলো করতে পারেনি। দূর্বল নেটওয়ার্ক, আর্থিক সমস্যা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব ইত্যাদি কারণে সকলের পক্ষে এই বিকল্প পদ্ধতি অনুসরণ সম্ভব হয়নি। এছাড়াও যারা ক্লাসগুলো করেছেন তাদের পক্ষেও সম্পূর্ণ মনোযোগী হওয়া সম্ভব হয়নি কিছু ক্ষেত্রে। তাই এমন অবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হবে। শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশই পিছিয়ে পড়বে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা যেন পিছিয়ে না পড়ে সেদিকে জোর দিতে হবে এবং বিশেষ পরিকল্পনার মাধ্যেমে শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সর্বোপরি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা আবার স্বভাবিক হয়ে উঠুক এই প্রত্যাশা করছি।
জোহরা মিম, নৃবিজ্ঞান বিভাগ
আগামীতে মেধাহীন জাতি উপহার দেওয়ার জন্য এটায় যথেষ্ট
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ৫০০ দিন পার হয়ে গেলো। এখন সঠিক কোন সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেনি শিক্ষামন্ত্রানালয়। একটি জরিপে দেখানো হয় বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের তালিকা। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ প্রাথমিক থেকে উচ্চ স্তর পর্যন্ত প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রথম আলোর আরেকটি একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, খাগড়াছড়ির দিঘিনালা উপজেলায় ১৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪১৭ জন শিক্ষার্থী এবার মাধ্যমিকে ফর্ম পূরন করেনি। তাদের কারো বাল্যবিবাহ কেউ আবার জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত হয়েছে। তাহলে আমরা বুঝতে পারছি দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার উপর কতটুকু বিপর্যয় নেমে এসেছে। আগামীতে মেধাহীন জাতি উপহার দেওয়ার জন্য এটায় যথেষ্ট। একটি দেশের মেরুদণ্ড শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। তাই শিক্ষামন্ত্রনালয়ের উচিত অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকার ব্যবস্থা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া। খনে খনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বন্ধ না বাড়িয়ে কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা নিশ্চিত করে দেশের ভঙ্গুর শিক্ষাব্যবস্তাকে দাঁড় করানো যায় সে পরিকল্পনা করা। পরিকল্পনায় আরো যুক্ত করা উচিত কিভাবে পিছিয়ে পড়া এবং লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়া শিক্ষার্থীদের আবার শিক্ষার সাথে যুক্ত করা যাবে৷
চৌধুরী মাসাবিহ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
এটাকে আমরা নতুন শিক্ষা বলতে পারি
করোনাকালীন লকডাউনে প্রভাবিত হওয়া খাতগুলোর মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থায় পড়েছে ব্যাপক প্রভাব। দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা হয়েছে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রাণোচ্ছল ক্যাম্পাসকে নিয়ে আসা হয়েছে অনলাইনের মাধ্যমে। দীর্ঘ বিরতির পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলার বিষয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে৷ আশা করা হচ্ছে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে।
করোনাকালীন শিক্ষার্থীরা রয়েছে শিক্ষা থেকে অনেক দূরে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষাক্রম স্বাভাবিক ভাবে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ নজর দিতে হবে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো উন্নত করা দরকার। ক্লাসেও মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার নিশ্চিত করা দরকার,কারণ সেখানে অডিও ভিজুয়াল মেটেরিয়াল ব্যবহার করা সম্ভব হয়। করোনা কালীন এ সময়ের জন্য পাঠ্যক্রম ব্যবস্থা পাল্টানোর একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এটাকে আমরা নতুন একটা শিক্ষা বলতে পারি। প্রায় একবছর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত আছে শিক্ষার্থীরা। এর কারণে অনেকটা সামাজিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে। অনেকের মধ্যে এক ধরনের কষ্ট এবং হতাশা তৈরি হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে গেলে ছাত্রছাত্রীদের হতাশা দুর হবে, আবার হয়তো আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারবে।
এ বিষয়ে সবথেকে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে শিক্ষকদের। শিক্ষার্থীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে শিক্ষাদান কর্মসূচি পালন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেন তাদের হতাশা প্রকাশ করতে পারে এবং নতুনভাবে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারে সেই সুযোগ প্রদান করতে হবে। প্রত্যাশা করছি দ্রুতই শিক্ষাব্যবস্থা আগের মতো ফিরে আসবে।
খাদিজাতুল কুবরা, ইংরেজি বিভাগ
সেশন জটের কবলে পড়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে
বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ খুব ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলো। ঠিক তখনি হানা দেয় মহামারি করোনা ভাইরাস। যার ফলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রথমে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকলেও তা শুধু বাড়তেই থাকে। চারদিক স্থবির হয়ে পরে।একমাস, দুইমাস, তিনমাস..এভাবে মাসের পর মাস যায়, যখন করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যখন অসম্ভব হয়ে পড়ে তখন পড়াশোনার গতি ধরে রাখার জন্য শুরু করা হয় অনলাইন ক্লাস। কিন্তু অনেকের ডিভাইস , মেগাবাইট না থাকায় ক্লাস করতে পারে নি। আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ডিভাইস থাকা সত্বেও অনলাইন ক্লাসের প্রতি অনীহা। বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী গ্রামে বাস করে। গ্রামে নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকায় অনেকেই ক্লাসে জয়েন হতে সমস্যার সম্মুখীন হয়। অনেক শিক্ষার্থী অনলাইন গেইমের প্রতি আসক্ত হয়ে উঠে। অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা ছেড়ে পরিবারের হাল ধরার জন্য কর্মমুখী হয়ে উঠে।পরিবারের চাপ কমানোর জন্য অনেক মেয়েই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। সেশন জটের কবলে পড়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। এই স্থবির হওয়া শিক্ষা কার্যক্রমকে বেগবান করতে শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় এনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা যাতে স্বশরীরে ক্লাস করতে পারে,বন্ধুদের সাথে হৈ-হুল্লোড় করতে পারে। আর যাতে লকডাউনের কারণে জনজীবন স্থবির না হয়ে পড়ে।সবকিছু আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে উঠুক এটাই কামনা।
সাজেদুর রহমান অন্তর, বাংলা বিভাগ