সাজ্জাদ হোসেন শিমুলঃ
কুমিল্লার মুরাদনগরে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে তিন ফসলি জমি থেকে মাটি উত্তোলনের ফলে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে প্রায় সকল কৃষক। উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে প্রায় দুই শতাধিক ড্রেজার দিয়ে প্রতিনিয়ত কৃষি জমি থেকে মাটি উত্তোলন করছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী চক্র।
এ বিষয়ে কৃষকরা অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়ার আগেই কাটা হয়ে যায় জমির মাটি। আর যদিও বা মাঝে মধ্যে প্রশাসনের লোকজন অভিযান পরিচালনা করতে বেড় হয় তার আগেই অদৃশ্য ভাবে খবর পেয়ে যায় ড্রেজার ব্যবসায়ীরা। ফলে তারা অভিযান চলা কালিন সময়ে মেশিনপত্র বন্ধ করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। পরক্ষণে প্রশাসনের লোকজন চলে গেলে তারা আবারো মাটি কাটার উৎসবে মেতে ওঠে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় অর্ধ শতাধিক জমির মালিক অভিযোগ করে ভালো কোন ফলাফল না পেয়ে নিরুপায় হয়ে তারা এখন ড্রেজার ব্যবসায়ী চক্রের কাছে জিম্মি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ৩১২টি গ্রামের মধ্যে প্রায় দু’শতাধিক গ্রামের কোন না কোন স্থানে ড্রেজার মেশিন চলে। মাইলের পর মাইল পাইপ সংযোগ দিয়ে ড্রেজিংয়ের মাটি দ্বারা কৃষি জমি, পকুর ও সরকারি খাস জমি ভরাট করা হচ্ছে। অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে ৫০/৬০ ফুট গভীর থেকে মাটি ও বালি উত্তোলনের কারণে আশ-পাশের তিন ফসলের জমিগুলো দিনদিন কূপে পরিনত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমান ২৪ হাজার ২৯৩ হেক্টর। এর মধ্যে বেশীর ভাগই দুই থেকে তিন ফসলী জমি। অথচ সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, বিলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত অনাবাদী রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাইন উদ্দিন আহম্মেদ সোহাগ বলেন, আমি উদ্ধিগ্ন ও আতংকিত। কেননা তিন ফসলি জমির টপসয়েল্ট (উর্ভর মাটির উপরের অংশ) ব্যাপক হারে কেটে নিচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ৬ মাসের মধ্যে চাষাবাদের জন্য একখন্ড জমি থাকবে না। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কড়া ভাবে নিষেধাজ্ঞা আছে জমির মাটি কেটে নিয়ে অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
ড্রেজার ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভূমি অফিসের তহসিলদার ও থানা ক্যাশিয়ারসহ বিভিন্ন কর্মচারীদেরকে সুবিধা দিয়ে এ অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
থানা পুলিশের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) নাহিদ আহম্মেদ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যদি কেউ জড়িত থাকে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অবৈধ ড্রেজার জব্দে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
অপরদিকে ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তহসিলদার দের মাসোয়ারা পাওয়ার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, দুই এক জনের বিরুদ্ধে আমি নিজেও অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে জরিতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যা গত এক বছরে প্রায় অর্ধশতাধিক ড্রেজারে অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে ধৃত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩ জনকে জেলে পাঠানো হয়েছে ও বাকি ৮ জনকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে। খবর পেলেই আমরা অভিযান পরিচালনা করি। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।