ডেস্ক রিপোর্টঃ
তফসিল ঘোষণার পর থেকেই হামলা, পাল্টা হামলা, ভাংচুর, আগুন, মামলা, পাল্টা মামলায় যেখানে আতংক বিরাজ করছিল, সেখানে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহনের দিনে উৎসবের আমেজ পরিলক্ষিত হয়েছে। এ চিত্র কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাসুদ আহমদ সিকদার বলেন, নির্বাচনে কোন প্রকার সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোট ভোটার ১৫ হাজার ৩৪ এর মধ্যে ৫ হাজার ৫৫০ ভোট পেয়ে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ইকবাল হোসেন সরকার (নৌকা) বে-সরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্ব স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুবকর (ঘোড়া) পেয়েছেন ২ হাজার ৪০৮ ভোট।
সরেজমিনে গিয়ে ব্রাহ্মণচাপিতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা মিলে হাজেরা খাতুন (১০১) ও আব্দুল মজিদের (১০৫)। তারা বার্ধক্যজনীত কারণে নুয়ে পড়ায় অন্যের কাধে ভর করে ভোট কেন্দ্রে আসেন ভোট দিতে। শেষ বয়সে দীর্ঘদিন পরে হলেও ভোট দিতে পেরে তাদের চোখে মুখে ছিল আনন্দের ঝিলিক।
কাঠালিয়াকান্দা কেন্দ্রের ভোটার গোলাম মহিউদ্দিন মোল্লা বলেন, স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার কারণে গত ২২ বছর এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের ভোট হতো না। প্রভাব খাটিয়ে পারিবার ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যেই তিনি চেয়ারম্যান ও মেম্বার সিলেক্ট করতেন। যার ফলে স্থানীয়দের মধ্যে এ বিষয়ে চাপা ক্ষোভ ছিল। গত ৪ বারের চেয়ারম্যান মারা যাওয়ায় এই উপ-নির্বাচনের আয়োজন। তবে নৌকার বিপক্ষের প্রার্থী যদি হেভী ওয়েট হতো তাহলে স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ভোটের মাধ্যমেই প্রকাশ পেত। সর্বোপরি ভোট হচ্ছে এটাই উৎসবের আমেজ।
ভোটে পরাজিত প্রার্থী আবুবকর (ঘোড়া) বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আওয়ামীলীগ প্রার্থী ও তার লোকজন আমাকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করার হুমকি দিয়েছিলেন। তাদের কথা না শোনায় আমার গণসংযোগে হামলা চালিয়ে ৯ জনকে আহত করে ৫টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করেছিল। পরে রাতের আধারে আমার নির্বাচনী অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনের পরে এলাকা ছাড়ার ভয়ে অনেকেই তাদের কথা শুনতে বাধ্য হয়েছে। যার ফলে আমি পরাজিত হয়েছি। তবে সুষ্ঠু ভোট হওয়ায় প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞ।
বিজয়ী প্রার্থী ইকবাল হোসেন সরকার (নৌকা) বলেন, ষড়যন্ত্র করে আমার বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল একটি পক্ষ। ভোটাররা ব্যালটের মাধ্যমে সঠিক জবাব দিয়ে আমাকে বিজয়ী করেছেন। সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ বলেন, কোন প্রকার সহিংসতা ছাড়াই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহন হয়েছে। যার ফলে বয়স্ক মানুষও ভোট দিতে পেরেছেন। প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোটারদের উপস্থিতি ছিল সরব।