নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে আনে।
৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা।
জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা সমুন্নত রেখে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে এ সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে।
এই নিরলস কাজ কলংকিত করতে মুক্তিযোদ্ধ বিরোধী রাজাকার, আলবদর ও আলসামস এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের উত্তরসূরিরা এখন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শাখার পদ-পদবি কিনে তারা হয়ে উঠেছেন বড় নেতাদের ঘনিষ্ঠ। একই সঙ্গে এসব পদবি ব্যবহার করে স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চাকরিতে নিয়োগসহ ব্যবসা, বাণিজ্য, ঠিকাদারিসহ সবকিছু নিজেদের আয়ত্বে নিয়েছেন। এমনকি মাদক ব্যবসায় জড়িত সিন্ডিকেট ও তাদের নিয়ন্ত্রণে।
ঐসকল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা তাঁদের প্রভাব খাটিয়ে ড্রেজার দ্বারা ভূগর্ভস্থ কোটি কোটি ঘন ফুট মাটি উত্তলন করে একরের পর একর ফসলি জমি ধংস করে কোটি কোটি টাকা আয় সহ অসহায় মানুষের জমি জবর দখল করে যাচ্ছে।
তাদের বিরুদ্ধে যখনই কেউ আওয়াজ তুলে বা প্রতিবাদ করে তখনই অবৈধ অর্থ ব্যবহার করে তাদের পালিত বাহিনীর লোকজন দ্বারা মিথ্যা মামলা দেয়াসহ নানান ভয়ভীতির কারণে সাধারণ জনগণসহ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা আজ কোণ্ঠাসা।
মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজাকার, আলবদর ও আলসামসের উত্তরসূরিরা আওয়ামী লীগে ‘অনুপ্রবেশের’ বিষয়টি এখন দেশময় আলোচিত-সমালোচিত ঘটনা। অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শাখার পদ-পদবি কিনেছেন তারা, হয়ে উঠেছেন বড়ো নেতাদের ঘনিষ্ঠ।
রাজাকার, আলবদর ও আলসামস, মুক্তযোদ্ধ বিরোধী মতাদর্শীরা দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে দুর্নীতি, চোরাচালান, জমি দখল, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টিআর-কাবিখা প্রকল্পে লুটপাটসহ নানা কর্মকাণ্ডে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তাদের দাপটে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও ত্যাগী নেতারা হয়ে পড়েছেন বিপর্যস্ত। দলীয় ফোরামের একাধিক বৈঠকে ত্যাগী নেতারা এই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে নানা তথ্য তুলে ধরেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি। বরং যারা তাদের এসব পদ-পদবি দিয়েছেন তারাই তাদের রক্ষা করেন। বিষয়গুলো দলীয় হাইকমান্ডের নজরের বাইরে নয়।
রাজাকার ও পাকবাহিনীর সহযোগিতায় গঠিত রাজাকার, আলবদর ও আলসামস ও পাক বাহিনীর সহযোগিতায় গঠিত শান্তি কমিটির প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন—এমন ব্যক্তি ও তাদের সন্তান-স্বজনদের কেউ কেউ নানা কৌশলে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোতে ঢুকে পড়েছেন। তবে জামায়াত তাদের আদিপিতা। জামায়াতের জন্মলগ্ন থেকেই দলটিতে তারা আছেন এবং থাকবেন। ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন করে সংঘবদ্ধ হয়েছেন তারা। আওয়ামী লীগে আশ্রয় নেওয়া বিরোধী মতাদর্শীর এই নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকেই হত্যা, সন্ত্রাস, নাশকতা, মাদক মামলার আসামি—এমন তথ্য সাংগঠনিক ও গোয়েন্দা রিপোর্টেও আছে।
জানা গেছে, এক সময় যারা জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ২০০৯ সালের পর তারা দলে দলে সরকারি দলে যোগদান করা শুরু করেন। সংঘবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যেই স্বাধীনতা বিরোধী আদর্শের মানুষরা অর্থের বিনিময়ে ও নানা কৌশলে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ছত্রছায়ায় আছেন, দলের গুরুত্বপূর্ণ পদও পেয়েছেন। একই সঙ্গে অতীত অপকর্ম থেকে রেহাই পাওয়া, দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার টার্গেট নিয়েও তারা ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিয়েছেন। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিজেদের আলাদা বলয় সৃষ্টি করতে রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটির সদস্যদের সন্তান-স্বজনদের থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়েছেন। এতে দলের ত্যাগী নেতারাও বঞ্চিত হয়েছেন।
অনুপ্রবেশকারী সবাইকেই নজরদারিতে রাখা হয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে যারা অপরাধী একে একে তাদের সবাইকে ধরা হবে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মাঠ থেকে হঠাৎ করেই বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-সমর্থকরা উধাও হয়ে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের সন্দেহ হয়। গোপনে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায় এ ভয়াবহ চিত্র। অনেকেই মিলেমিশে একাকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। আবার কেউ কেউ নিজেরাই আওয়ামী লীগ কর্মী সেজে ব্যবসা-বাণিজ্য ও নানামুখী কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে নিজেদের সরকার সমর্থক হিসেবে জাহির করছেন। তবে অতি ভক্তি যে চোরের লক্ষণ। এটা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড গোপনে তাদের তালিকা প্রণয়নের করে আওয়ামী লীগের একটি বিশেষ টিমকে আগামী নির্বাচনের আগেই কাজে লাগাতে হবে। এছাড়া একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাও কেও কাজে লাগাতে হবে। এতে অর্ধ লক্ষাধিক বিরোধী মতাদর্শীর অনুপ্রবেশের চিত্র উঠে আসবে। বিতর্কিত বিরোধী মতাদর্শীর তালিকা তৃণমূলে পাঠানোসহ তাদের দল থেকে বাদ দিতে নির্দেশ দেওয়া প্রয়োজন।
জানা যায়, অতীতে তৃণমূল আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ পদ পান বিরোধী মতাদর্শীরা। উপজেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে পদ বেচা-কেনার ঘটনা ছিল অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’। অর্থের বিনিময়ে এসব পদে এসেছেন তারা।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় ফোরামের প্রায় ১০টি কর্মসূচিতে অনুপ্রবেশকারীদের দলে না নেওয়ার বিরুদ্ধে সতর্কও করে দিয়েছেন। দলীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি স্পষ্ট বলেছেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল, এই দলে পরগাছাদের কোনো জায়গা নেই।
আওয়ামী লীগের একজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জানান, অনুপ্রবেশকারীরাই আওয়ামী লীগের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা যে দলের ক্ষতি করতে এসেছিল তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে দলটি।
অনুপ্রবেশকারীদের হাতে সংঘটিত বেশ কিছু বিতর্কিত ঘটনায় বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। সরকার ও দলকে বারবার বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার নতুন কৌশল বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়েই তারা আওয়ামী লীগে এসেছে—এ বিষয়টি দলের হাইকমান্ড আঁচ করতে পেরেছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এ নিয়ে চরম বিরক্ত। ইতিমধ্যে তিনি অনুপ্রবেশকারীদের একটি দীর্ঘ তালিকা দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠিয়েছেন।
ধারাবাহিক পর্ব – ০১