ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধিঃ
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে লাগেজ থেকে এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় প্রায় ২মাস পর হত্যা রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) ময়মনসিংহ। এই ঘটনায় দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আজ শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার সত্যতা বিস্তারিত তুলে ধরেন ময়মনসিংহের পিবিআই পুলিশ সুপার, গৌতম কুমার বিশ্বাস। তিনি জানান, গত ৯ নভেম্বর ২০২০ ইং সকাল সাড়ে সাতটার দিকে গৌরীপুরের গঙ্গাশ্রম গ্রামের জোড়া ব্রিজের নীচে সন্দেহজনক একটি লাগেজ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে গৌরীপুর থানা পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআই দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়।
এরই মাঝে থানা পুলিশ তাদের প্রাথমিক আইনানুগ কার্যক্রম শেষ করেন। অজ্ঞাতনামা নারীর মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ মর্গে। অজ্ঞাতনামা আসামী করে গৌরীপুর থানার মামলা দায়ের করা হয়। থানা পুলিশ মামলাটি তদন্তকালে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা গত ১৫ নভেম্বর স্বউদ্যোগে মামলাটি অধিগ্রহণ করে।
কিন্তু কী লাশের পরিচয়? কারা করেছে খুন? চলতে থাকে তদন্ত কার্যক্রম। ভিকটিমকে সনাক্তের জন্য তার ছবি সোশাল মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়ার প্রচার করা হয়। ময়মনসিংহসহ আশপাশের জেলা সমূহে লাশের ছবি দিয়ে পোষ্টারিং করা হয়। এছাড়াও ময়মনসিংহ হতে চলাচলকারী বাসের পিছনে পোষ্টারিং করা হয়। জব্দকৃত আলামত বারবার পরীক্ষা করা হয়। একপর্যায়ে লাগেজে একটি আইডেন্টিটি মার্ক পাওয়া যায়। তারই সূত্র ধরে এগোতে থাকে মামলার তদন্ত কার্যক্রম।
পিবিআই পুলিশ সুপারের তত্ত্বাবধানে ও দিকনির্দেশনায় তদন্তকারী অফিসার পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল কাশেম, পিপিএম গত ২৭ জানুয়ারি রাত আনুমানিক আটটার দিকে মধ্য বারেরা এলাকা থেকে আবুল খায়ের মো. জাকির হোসেন ওরফে সোহাগ (৪৪), পিতা-আঃ কুদ্দুছ, সাং-গঙ্গাদাস গুহ রোড (তৈমুর টাওয়ার), কোতোয়ালী সদর, ময়মনসিংহ ও তার স্ত্রী রিফাত জেসমিন জেসি (৩০) কে গ্রেফতার করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে গৌরীপুরের গঙ্গাশ্রম এলাকার জোড়া ব্রীজের নীচে পাওয়া লাগেজ বন্দি অজ্ঞাত মেয়ের হত্যাকান্ডের রহস্য।
তিন বোনের মধ্যে সবার বড় সাবিনা (২০)। সে লেখাপড়া করেছে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত। সে সদর উপজেলার উজান ঘাগড়া ইউনিয়নের সিরাজুল ইসলামের মেয়ে। দারিদ্রতার তীব্র কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে বন্ধ করে দেন মেয়ের লেখাপড়া।
সিরাজুল ইসলাম একটু উন্নত জীবনের আশায় তার মেয়ে সাবিনাকে কোতোয়ালী থানাধীন গঙ্গাদাস গুহ রোড এর তৈমুর টাওয়ারে বসবাসরত মেরিন ইঞ্জিনিয়ার আবুল খায়ের মো. জাকির হোসেন ওরফে সোহাগ এর বাসায় রাখেন গৃহকর্মী হিসেবে।
সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতিতে নেমে আসত শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন। বন্ধ হয়ে যায় বাবা মায়ের সাথে দেখা করার ও কথা বলার সুযোগ। গৃহকত্রীর অমানুষিক নির্যাতনে তিলে তিলে শরীর শীর্ণকায় হয়ে যায় সাবিনার। ঘটনার দিন গত ৮ নভেম্বর গৃহকর্তা জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী জেসির অমানুষিক শারীরিক নির্যাতনে নিভে যায় সাবিনার জীবন প্রদীপ। পরে জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী জেসি গৃহকর্মী সাবিনার মৃতদেহ লুকানোর পরিকল্পনা করতে থাকেন।
পরিকল্পনা মোতাবেক জাকির হোসেন ঐ দিন সন্ধ্যা অনুমানিক সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার ফ্ল্যাটের স্টোর রুম থেকে চটের বস্তা এবং তার মালিকানাধীন পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট থেকে এমএসবি (গঝই) লেখা সম্বলিত ৫ টি ইট সংগ্রহ করেন।
চাইল্ড বেডরুমের বারান্দা থেকে তার ব্যবহৃত পুরাতন মেরুন কালারের ১টি বড় লাগেজ বের করেন। প্রথমে বস্তার ভিতরে সাবিনার মৃতদেহ ও ৫ টি ইট ভরে বস্তার মুখ বন্ধ করেন আর লাশ ভর্তি বস্তাটি লাগেজে ঢুকান। জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী জেসি দু’জন মিলে সাবিনার মৃতদেহ তাদের গাড়ীর পিছনের ডালাতে ভরে রাত অনুমান ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে গৌরীপুর উপজেলার গঙ্গাশ্রম এলাকার জোড়া ব্রীজের নীচে পানিতে ফেলে দিয়ে আসেন।
গ্রেফতারকৃত আসামী জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী জেসি কে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামী জাকির হোসেন স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।