ডেস্ক রিপোর্টঃ
তিনি ডাক্তার নন। নেই কোন ডিগ্রী বা ডিপ্লোমা তবুও তিনি একজন ডাক্তার। ভূল করেও ভাববেন না যেই সেই ডাক্তার তিনি। তিনি জটিল সব রোগের অপারেশনও করেন। নামের আগে ডাক্তার লিখে প্রতারণা করে আসছেন বছর বছর ধরে।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে নিজ বাড়িতে চেম্বার খুলে নিয়মিত রোগী দেখেন সুলতানা নাজনীন নামের এক ভূয়া নারী চিকিৎসক। রোগী দেখে প্রেসক্রিপশনের পাশাপাশি তিনি গর্ভপাতসহ করে থাকেন সার্জারীও। এমবিবিএস না হয়েও তিনি নামের আগে ডাক্তার লিখে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।
সুলতানা নাজনীন জেলার হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে চাকরী করে আসছেন। স্বীকৃত ডাক্তারদের সহযোগী হিসেবে কাজ করাই তার দায়িত্ব হলেও তিনি সরকারী বিধি ভঙ্গ করে নামের আগে ডা: লিখে নিজ প্যাডে দিচ্ছেন রোগীদের ব্যবস্থাপত্র।
বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল এ্যাক্ট-২০১০ এর ২৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে, নূন্যতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রীধারী ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারবেনা। যদি কোন ব্যক্তি এই বিধি লঙ্ঘন করেন তাহলে তা একটি অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।
এর জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির ৩ (তিন) বৎসর কারাদন্ড বা ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থ দন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হবেন। আইনে আরো বলা আছে, উক্ত অপরাধ অব্যাহত থাকলে, প্রত্যেকবার তার পুনরাবৃত্তির জন্য (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থ দন্ডে, বর্ণিত দন্ডের অতিরিক্ত হিসাবে, দন্ডনীয় হবেন।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুলতানা নাজনীন হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ সংলগ্ন এলাকায় নিজ বাড়িতে চেম্বার খুলে নিয়মিত রোগী দেখেন। তার প্রতিষ্ঠানের নাম তাশরিফা মেডিকেল সেন্টার। ওই বাড়িতেই তিনি নারীদের নিয়মিত গর্ভপাত এবং সার্জারী চিকিৎসা করে থাকেন। সম্প্রতি এক নারীকে বাচ্চা প্রসব করানোর সময় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে ওই নারীর পরিবারের সাথে সমঝোতা করেন তিনি।
অভিযুক্ত সুলতানা নাজনীন বলেন, বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল এসোসিয়েশনের বড় ভাইরা আমাদের ডাক্তার লিখতে বলছেন। তাই আমি ডাক্তার লিখে চিকিৎসা দিচ্ছি এ নিয়ে সমস্যার কি আছে। তবে, এই সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য তিনি এই প্রতিবেদককে বিভিন্নভাবে ম্যানেজের চেষ্টা চালায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা: ইশরাত জাহান শর্মী জানান, ”সুলতানা নাজনীনের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে অনেক অভিযোগ শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ডা: আনোয়ারুল আমিন আখন্দ জানান, ”বিএমডিসির আইন অনুযায়ী এমবিবিএস অথবা বিডিএস ছাড়া কেউ নামের আগে ডা: কথাটি লিখতে পারেননা। যদি কেউ এই আইন অমান্য করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”