ডেস্ক রিপোর্টঃ
আজ ৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের প্রধান জহুর আহমেদ চৌধুরী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পুরাতন কাচারী ভবন সংলগ্ন তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষকরা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে শত্রুমুক্ত করতে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে জেলার আখাউড়া সীমান্ত এলাকায় মিত্রবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর বেপরোয়া আক্রমণ চালাতে থাকে। পরে ১ ডিসেম্বর আখাউড়া সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধে ২০ হানাদার নিহত হয়। ৩ ডিসেম্বর আখাউড়ার আজমপুরে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। সেখানে ১১ হানাদার নিহত হয়। শহীদ হন ৩ মুক্তিযোদ্ধা। এরই মাঝে বিজয়নগর উপজেলার মেরাশানী, সিঙ্গারবিল, মুকুন্দপুর, হরষপুর, আখাউড়া উপজেলার আজমপুর, রাজাপুর এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে।
৪ ডিসেম্বর হানাদাররা পিছু হটতে থাকলে আখাউড়া অনেকটাই শত্রুমুক্ত হয়ে পড়ে। ৬ ডিসেম্বর আখাউড়া সম্পূর্ণভাবে হানাদার মুক্ত হয়। এরপর থেকে চলতে থাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত করার প্রস্তুতি। শহরের চতুর্দিকে মুক্তিবাহিনী অবস্থান নিতে থাকায় পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যাওয়ার সময় ৬ ডিসেম্বরে রাজাকারদের সহায়তায় অর্ধশত বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষকে চোখ বেঁধে শহরের কুরুলিয়া খালের পাড়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। ৭ ডিসেম্বর রাতের আধারে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ছেড়ে আশুগঞ্জের দিকে পালাতে থাকে।
৮ ডিসেম্বর কোনও ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বিজয়ের বেশে প্রবেশ করে স্বাধীনতার বিজয় পতাকা উত্তোলন করে। এরই মধ্যে শত্রু মুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর। একই দিন সন্ধ্যায় জেলার সরাইল উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুক্তিযোদ্ধ গবেষক ও কবি জয়দুল হোসেন জানান, ৭ ডিসেম্বর আখাউড়াতে পরাজিত হওয়ার পর সন্ধ্যার মধ্যে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ছেড়ে আশুগঞ্জে চলে যায়। ৮ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহরে পৌঁছে যায়।
কোনও ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই ৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত হয়। যারা প্রাণের ভয়ে শহর ছেড়ে দিয়েছিলেন তারা সেদিন শহরের রাস্তায় নেমে যায় এবং জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে তাদেরকে অভিনন্দন জানায়।