সাজ্জাদ হোসেন শিমুলঃ
এটি কোন জলোচ্ছ্বাস, সুনামি, আইলা, সিডর বা হ্যারিক্যানের উলঙ্গ তান্ডব নয় এটি প্রায় ৫০ বছরের কষ্টের লালিত ভিটেমাটিতে বসবাস করা ৪ টি অসহায় পরিবারকে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক উচ্ছেদ এর দৃশ্য! শত বছর বয়সী ইলিয়াস মোল্লা বলেন আমার জায়গাজমি কিছুই নেই ৫০/৬০ বছর ধরে অনেক কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে মানুষের নিকট থেকে জাকাত, ফেতরার টাকা ও অন্যের জমিতে কাজ করে গর্ত ভরাট করে এই বাড়ীটিকে বসবাস যোগ্য করে তুলেছি, ৩ ছেলে ২ মেয়ে পড়াশুনা করিয়ে মানুষ করে নিজে দাড়াবার চেষ্টা করেছি, এতো বছর পর আমাদেরকে কোন নোটিশ না দিয়ে প্রশাসন বাড়ীঘর ভেঙে দিল! এখন আমি কোথায় যাব? তার ছেলে মাওলানা জোনায়েদ আহমেদ বলেন, আমরা ইমামতি করে অনেক কষ্টের প্রায় ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে দুটি ঘর তুলে ছিলাম, ঘরের বকেয়া টাকা এখনো দিতে পারিনি, আমাদের কোন মালামাল বের করার সুযোগ না দিয়ে পাকের ঘর, বাথরুমসহ প্রায় ৭ লক্ষ টাকার ক্ষতি করেছে প্রশাসন। এখন আমাদের কোথাও যাওয়ার যায়গা নেই।
হাসিয়া বেগম (৬৫) স্বামী মরহুম নুরুল ইসলাম মারা গেছেন প্রায় ৩৫ বছর আগে, তিনটি এতিম মেয়েকে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় লালন পালন করে বিয়ে দিয়েছেন, তার দুটি ঘর, গাছপালাসহ প্রায় ৪ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন, সাংবাদিকদের দেখে অশ্রুসিক্ত হয়ে তিনি বলেন আমার সব শেষ! এখন কোথায় যাব? ফিরোজা বেগম (৫৫),স্বামী মরহম মতিউর রহমান, মারা গেছেন ৫ বছর আগে ৩ ছেলে ২ মেয়ে নিয়ে বসবাস করেছেন অনেক বছর, তার দুটি বসত ঘর, পাকের ঘরসহ ক্ষতির পরিমান প্রায় ৫ লক্ষ টাকা বলে তিনি জানিয়েছেন। শাহনাজ বেগম( ৪৮), স্বামী মরহুম মোবারক হোসেন মারা গেছেন ৩ বছর আগে ৩ ছেলে ২ মেয় নিয়ে এ বাড়িতে বসবাস করতেন তার তিনটি ঘর গাছ পালাসহ প্রায় ৬ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ ব্যপারে সাবেক জনপ্রতিনিধি সুনিল মেম্বার বলেন এ পরিবারগুলিকে আমি ৪০/৪৫ বছর ধরে দেখছি এখানে বসবাস করতেছে, সাবেক রহমান চেয়ারম্যান সাহেব ৭ টি পরিবারকে থাকার জন্য এ জায়গাটি দিয়েছিলেন।
এ ব্যপারে ফরদাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম বলেন দু’দিন আগে এসিলেন্ড অফিস থেকে আমাকে জানানো হয়েছে একটি বাড়ি উচ্ছেদ হবে আমাকে থাকতে হবে এতটুকু জানি, ক্ষতিগ্রস্তদের আগে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল কিনা তা আমি জানিনা।
এ ব্যাপারে অভিযোগকারী পারভীন আক্তার বলেন এটি মহাজন সম্পদ, পাকিস্তান সরকার আমার বড় আব্বাকে দিয়েছিলেন, সরকার বাদী কেইস হইছে, এক বছর ধরে তাদেরকে বাড়ি ছাড়তে বলা হচ্ছে তারা বাড়ি ছাড়েনি এ জন্য প্রশাসন এসে ভেঙে দিয়েছে, আগে নোটিশ দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে পারভীন বলেন নোটিশ দেওয়া হয়েছে, আমার নিকট নোটিশ থাকবে কেন? তাদের নিকটেই আছে।
এ ব্যাপারে বাঞ্ছারামপুর ইউএনও’র কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, উচ্ছেদ মামলা কর্তৃক মূলে উচ্ছেদ পরিচালনা করা হয়েছে। এটা ডিসি অফিস জানে আমাদের কিছুনা। এবং তাঁদেরকে একাধিকবার নোটিস করা হয়েছে বলে জানান তিনি। পরে “উচ্ছেদের পর থেকে তারা খোলা আকাশের নিচে অবস্থা করার কথা জানার পর” তিনি বলেন, তারা যদি গৃহহীন হয় তাহলে এসিলেন্ড অফিসে যোগাযোগ করলে আমরা যাচাই বাছাই করে ব্যাবস্থা নিবো।