ডেস্ক রিপোর্টঃ
বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ঈদের দিন আজ শনিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাথে সাক্ষাতের পরে চেয়ারপারসনের বাসভবন ফিরোজার বাইরে অপেক্ষামান সাংবাদিকদের কাছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় প্রধানের এই বার্তার কথা জানান।
গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসা ‘ফিরোজায়’ রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এই সাক্ষাত হয়। ‘ফিরোজায়’ প্রবেশের পর নেতারা পিপিই পড়ে দোতলায় ড্র্রয়িং রুমে বসেন। সেখানে এই সাক্ষাত হয়।
সাক্ষাতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের সাজা স্থগিত করে মুক্ত হওয়ার পর প্রথম গত ২৫ মে ঈদুল ফিতরের দিন স্থায়ী কমিটির সদস্যদের খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাত হয়েছিলো।
এর আগে ঈদুল আজহার নামাজের পরে সকাল ১১টার দিকে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে বিএনপি মহাসচিব শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেন।
ফিরোজার নিরাপত্তা কর্মীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সকাল ঈদের নামাজের পর বোন সেলিমা ইসলাম ও ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দর ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতিমা বাসায় আসেন। দুপুরের খাবার বোনকে নিয়ে খালেদা জিয়া খেয়েছেন।
খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে ফিরোজায় আসার পর থেকে তার কয়েকজন স্বজন ছাড়া প্রবেশাধিকারের ব্যাপারে কঠোর কড়াকড়ি রয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই কোভিডে জনগণের পাশে দাঁড়ানো, বন্যা পরবর্তিতে যে সমস্যা দাঁড়াবে তার জন্য তাদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে যতটুকু সম্ভব কর্মীদেরকে-নেতাদেরকে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ম্যাডাম এতোই অসুস্থ নিজেও বাসার নিচে নামতে পারেন না, হাঁটতেও পারেন না। তার এখনো খাওয়া-ধাওয়ায় সমস্যা, খেতেও সমস্যা হচ্ছে বিভিন্ন রকম ভাবে। আসলে ম্যাডামের উন্নত চিকিৎসা যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে না। হাসপাতালেও যাওয়া যাচ্ছে না এখানে যে পরিস্থিতি চলছে। সব মিলিয়ে তার শারীরিক অবস্থাটা ভালো না।
কি কথা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কথা বলেছি, ঈদের দিনে যেসব কথা বলা হয়। এতোদিন ধরে আমরা একসাথে কাজ করছি, সকলের সুখে-দুঃখের কথা-বার্তা আছে।
আপনারা জানেন ইতিমধ্যে আমাদের দলেরই অনেকে নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী তারা করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাদের সম্পর্কে কথা হয়েছে, তাদের পরিবার পরিজনদের নিয়ে কথা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকের ছেলে-মেয়ের বিয়ে হয়েছে, অনেকে চলে গেছেন। সব কিছু মিলিয়ে বলা যেতে পারে সুখ-দুঃখের আলাপ হয়েছে।
ফখরুল বলেন, করোনা সংক্রামণের যে বর্তমান অবস্থা, বন্যার যে বর্তমান অবস্থা, দেশের অর্থনীতির যে পরিণতি হতে যাচ্ছে-সে সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষেরা তাদের যে নিদারুণ কষ্ট আর কিছুদিন পরে কী অবস্থা দাঁড়াবে সে নিয়ে কথা হয়েছে। আলোচনার বেশির ভাগ সময় ছিলো কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতি অবস্থা ও বন্যা পরবর্তী অবস্থা কি হবে, যেহেতু শোনা যাচ্ছে এবারকার বন্যা লংটার্ম বন্যা থাকবে। তাহলে দেশের বন্যাকবলিত মানুষের কিভাবে পুনর্বাসিত হবে, কৃষকেরা কিভাবে থাকে সে নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
দল যাতে সঠিক ভাবে চলতে পারে তা নিয়েও দলের চেয়ারপারসনের সাথে আলোচনা হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, দেশে বর্তমান যে কোভিড পরিস্থিতি, বন্যা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক যে অবস্থা –এটা তো স্বাভাবিক নয়। এটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি।
এই পরিস্থিতিতে উনার বিরুদ্ধে, দেশের সব মানুষের বিরুদ্ধে বিশেষ করে যারা ভিন্নমত পোষণ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম মামলা-মোকাদ্দমা, জেল-জুলুম চলছে। এর মধ্যে তিনি দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন।
খালেদা জিয়ার নির্বাহী আদেশে মুক্তির ছয় মাসের সময়সীমা প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে পরবর্তী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই বিষয়টা নিয়ে এখনো বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি। সময় আসলে আলোচনা হবে