অনলাইন ডেস্কঃ
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হ’ত্যার পর তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান মন্ত্রী হওয়ার জন্য আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিল। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ টেলিভিশনে দেয়া রেকর্ডকৃত এক সাক্ষাতকারে বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, কর্নেল মাহফুজুর রহমানের মাধ্যমে জিয়া আমাকে মন্ত্রী হওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল।
আমি যদি প্রস্তাবে রাজি না হই তাহলে একই সময়ে সে আমাকে ২৫ বছর জেলে থাকতে হবে বলেছিল। জিয়াউর রহমানের প্রস্তাবের উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, আমি ১৯৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জে আয়োজিত আলোচনা সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু হ’ত্যার প্রতিবাদ করি। বক্তৃতায় আমি বলেছিলাম, ‘হিটলার-মুসোলিনি থেকে শুরু করে কোনো স্বৈ’রাচারই টিকেনি, এ দেশেও টিকবে না।’
তৎকালীন ছাত্র নেতা ও তরুণ সংসদ সদস্য হামিদ আরো বলেন, এই অপরাধেই বোধহয় কিছুদিন পর আমি গ্রেপ্তার হই। জেলের ভেতরেই জিয়াউর রহমান তার সামরিক সচিব কর্নেল মাহফুজুর রহমানের মাধ্যমে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পাঠান। বলা হয়েছিল, প্রস্তাবটি না মানলে ২৫ বছর জেলে থাকতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বে’ইমানি করতে পারিনি বলে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিই। জীবনভর বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে তার আদর্শ আঁকড়ে ধরেই থাকতে চেয়েছি।রাষ্ট্রপতি বলেন, মুক্তিযু’দ্ধের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হ’ত্যার মাধ্যমে বাঙালির স্বাধীনতা ও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল। তারা শুরু করেছিল বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযু’দ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস বি’কৃতির পালা।
বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে “ইনডেমনিটি আইন” পাশ করে।রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমৃ’ত্যু দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করেছেন। দেশের মানুষকে নিজের প্রাণের চেয়েও বেশ ভালবেসে গেছেন। তিনি কখনো ভাবতেও পারেননি যে, কোন বাঙালি তাঁকে হ’ত্যা করতে পারে। কিন্তু মুক্তিযু’দ্ধের পরাজিত শক্তি সবসময়ই সুযোগ খুঁজতে থাকে। এসময় ছোটখাট কিছু ঘটনা ঘটলেও বঙ্গবন্ধু কখনোই সেসব আমলে নিতেন না।
আবদুল হামিদ বলেন, নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যে কোন দেশের জন্যই সম্পদ। তাই তাদেরকে সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। নিজের দেশ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানাতে হবে।
বাংলাদেশকে জানতে হলে বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। আর বঙ্গবন্ধুকে জানতে হলে আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযু’দ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখন আর শুধু একটি নাম নয়। বঙ্গবন্ধু একটি প্রতিষ্ঠান, একটি কালজয়ী ইতিহাস ও একটি সত্ত্বা। বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু রেখে গেছেন তাঁর রাজনৈতিক দর্শন, নীতি ও আদর্শ যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সকলকে আলোর পথ দেখাবে, উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে সাহস যোগাবে।