নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার মুরাদনগরে ফ্রান্স সরকারের ইসলাম বিদ্বেষী নীতিকে সমর্থন করে ফেইসবুকে পোষ্ট ও মন্তব্যের জেরে মন্দির ও একাদিক হিন্দু বাড়ীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গণশুনানী হয়েছে।
গত সোমবারে এই ঘটনায় বাঙ্গরা বাজার থানায় ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাঙ্গরা বাজার থানার পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর গ্রামের অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ইউপি চেয়ায়ম্যান অধ্যাপক বন কুমার শিব, স্বদীপ কুমার শিব, লিটন দেবনাথ এবং ভারতী দেবনাথ বাদী হয়ে পৃথক ৪ টি মামলায় করেন। এতে মোট নামসহ এবং অজ্ঞাত প্রায় ১২৮২ জনকে আসামী করা হয়।
উক্ত ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুক্রবার কোরবানপুর গ্রামের অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বন কুমার শিবের বাড়ীতে গণশুনানীর আয়োজন হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম কমল, বাঙ্গরা বাজার থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) অমর চন্দ্র দাশ, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সরকার, পূর্বধইর পূর্ব ইউপি চেয়ায়ম্যান বন কুমার শিব, পূর্বধইর পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম, আন্দিকুট ইউপি চেয়ায়ম্যান ওমর ফারুক প্রমূখ।
কুমিল্লার মুরাদনগরের ৪ নম্বর পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুরে অগ্নিকাণ্ড ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছিল মূলত রাজনৈতিক ও নির্বাচনী দ্বন্দ্বের কারণে। সাম্প্রদায়িক কারণে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। সহিংসতার জেরে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে অংশ নেওয়া স্থানীয় লোকজন এই বক্তব্য দিয়েছেন। ঘটনার তদন্তে শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত গণশুনানি করেন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম কমল। এতে উপস্থিত ৬০০ জনের মধ্যে ৩২ জন লিখিত বক্তব্য দেন।
গণশুনানিতে অংশ নিয়ে পূর্বধইর পূর্ব ইউপি চেয়ারম্যান বন কুমার শিব বলেন, শুরুটা সাম্প্রদায়িক ইস্যু নিয়েই হয়েছিল। পরে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য সহিংসতা ঘটানো হয়।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার আব্দুল আজিজ বলেছেন, চেয়ারম্যানের বাড়িতে যে ধরনের লুটতরাজ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। কারণ চেয়ারম্যান বন কুমার শিব দুইবার নির্বাচিত। এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা কেউ মেনে নিতে পারছে না। এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া দরকার।
স্থানীয় তপন মিয়া বলেন, বন কুমার শিবকে পুড়িয়ে মারার জন্যই বাড়িতে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়েছে। কারণ বর্তমান চেয়ারম্যানকে মেরে ফেলতে পারলে সুবিধাভোগীদের লাভ হবে। এই ঘটনায় বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের পাশাপাশি আওয়ামী লীগেরও একটি অংশ জড়িত ছিল। তারা সবাই মিলে পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে।
স্থানীয় বাচ্চু ডাক্তার বলেন, আমাদের এলাকাটি ছিল সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। হঠাৎ কিছু লোক আক্রমণ করে এই সম্প্রীতিতে ভাঙন ধরিয়েছে। আমি চাই, এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার হোক এবং স্থানীয় হিন্দুরা এখানে আগের মতোই সহাবস্থান করবে।
মুরাদনগর সার্কেলের এএসপি জাহাংগীর আলম বলেন, গত ১ নভেম্বর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করতে চাই। এ জন্য গণশুনানির পাশাপাশি তদন্তও চলছে। আশা করি, প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
গত ১ নভেম্বর কোরবানপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ছয়টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সহিংসতার ঘটনার নতুন করে ৩ জনকে আটকের আদালতের মধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। শুক্রবারে আটকৃত আসামীরা হলেন: কোরবানপুর গ্রামের সেলিম মিয়া, নবীয়াবাদ গ্রামের মোঃ বাতেন মিয়া এবং মোঃ নুর মিয়া। এ পর্যন্ত এ ঘটনায় মোট ১৫ জন আসামী কারাগারে রয়েছেন।