সাজ্জাদ হোসেন শিমুল:
কুমিল্লার দেবিদ্বরে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় পেটে গজ রেখে দেয়ার ৫ মাস পর ফের অপারেশন করে গজ বের করা হয় শারমিন আক্তার (২৫) এর। মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে জীবনের সাথে লড়াই করে অবশেষে মৃত্যুর বরন করেন শারমিন।
মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে লাইফসাপোর্টে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শারমিনের স্বামী রাসেল মিয়া। তার মৃত্যুর সংবাদে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে এবং অপারেশন করা ওই চিকিৎসকের শাস্তি দাবি করেন এলাকাবাসী।
সিজারের মাধ্যমে একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন শারমিন আক্তার। অস্ত্রোপচারের পর দিন যত গড়ায়, শারমিনের শারীরিক অবস্থার তত অবনতি হতে থাকে। পাঁচ মাস পর জানা যায়, চিকিৎসক তার পেটে গজ রেখেই সেলাই করেছেন।
পাঁচ মাসের বেশি সময় ভোগার পর মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে মৃত্যু হয়েছে শারমিনের। তার বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার হোসেনপুরে। স্বামী রাসেলসহ থাকতেন পাশের উপজেলা মুরাদনগরে।
শারমিনের বড় ভাই রুহুল আমিন জানান, গত ৫ নভেম্বর দেবিদ্বারের আল ইসলাম ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হসপিটালে তার বোনের অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক রোজিনা ও তার সহযোগী শারমিন আক্তার লিন্টা।
অস্ত্রোপচারের পর ব্যথার কথা জানালে রোজিনা জানান, সিজার হলে ব্যথা হয়। ব্যথা কমানোর জন্য তিনি এক মাসের ওষুধ দেন। কিন্তু সেই ওষুধে কোনো কাজ হয় না। ঢাকাতেও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করান। কিন্তু অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হতে থাকে।
এভাবে প্রায় চার মাস পার হওয়ার পর শারমিনকে কুমিল্লা ময়নামতি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কিছু পরীক্ষা দিলে সেগুলো কুমিল্লা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে করানো হয়।
পরীক্ষা করে চিকিৎসক কর্নেল শরিফুল ইসলাম নিশ্চিত হন, শারমিনের পেটে গজ রয়েছে। ৫ এপ্রিল অস্ত্রোপচার করে তিনি গজ বের করে আনেন।
কিন্তু পেটে ইনফেকশন হওয়ায় রোগীকে পাঁচ দিনের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক শরিফুল।
শারমিনের স্বামী রাসেল জানান, তার স্ত্রীকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এই দম্পতির সাড়ে তিন বছর বয়সী আরেকটি মেয়ে আছে। দুই সন্তান নিয়ে তিনি অসহায় অবস্থায় পড়েছেন। বিচার দাবি করেছেন চিকিৎসকদের।
এ বিষয়ে আল ইসলাম ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়াজ মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘বুধবার শারমিন আক্তারের জানাজা শেষে আমরা ডাক্তারদের নিয়ে বসব। তারপর বিস্তারিত বলব।’
জেলা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন বলেন, ‘আমি ঘটনা জেনেছি। আমরা এখনও ভুক্তভোগী পরিবার থেকে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবু আমরা ওই ডাক্তার ও তার সহযোগীর বিষয়ে তদন্ত করব। তাদের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’