ফয়সাল, স্টাফ রিপোর্টারঃ
কুমিল্লার ব্যাপক চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত হত্যাকান্ড মাথাবিহীন অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার। মরদেহের অংশবিশেষ উদ্ধার হলেও মাথার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত জেলার লাকসামে টোকাইবেশে থাকা খুনি জামাল হোসেন (৫০) গ্রেফতার হলে ১০দিন পর খন্ডিত মাথার সন্ধান পাওয়া যায়। তার দেয়া তথ্যমতে জেলা পিবিআই এর এস.আই ইব্রাহিম ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার টাটেরা গ্রামের একটি পুকুর থেকে পলিথিন মোড়ানো খন্ডিত ও অর্ধগলিত মাথা উদ্ধার করেন।
সূত্রে জানা যায়, গত ১০ জুলাই কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাহেবাবাদ ইউনিয়নের টাটেরা গ্রামের একটি পুকুরপাড়ের নির্জন এলাকায় স্থানীয়রা মাথাবিহীন অজ্ঞাত যুবকের খন্ডিত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ব্রাহ্মণপাড়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মাথাবিহীন মরদেহটি উদ্ধার করে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে একটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই যুবকের খন্ডিত দেহ উদ্ধারের পর মাথা উদ্ধারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে গেলেও চারদিনেও সন্ধান মিলেনি।
গত ১৪ জুলাই মামলাটি পিবিআই এর নিকট হস্তান্তর করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পান জেলা পিবিআই সদস্য এস. আই মোঃ ইব্রাহিম। রহস্য উদঘাটনে তিনি মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্দার করা মুঠোফোনের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে সন্দেহভাজন জামাল হোসেনকে গ্রে’ফতারের চেষ্টা চালান এস. আই মোঃ ইব্রাহিম। প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারেন জামাল লাকসাম জংশন এলাকায় অবস্থান করছেন।
রবিবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে লাকসাম জংশন এলাকার এক ব্যবসায়ীর দেয়া তথ্যমতে, লাকসামের সাংবাদিক আবদুল কাদের অপু ও তার সহকর্মী আবদুর রহমান স্থানীয়দের সহায়তায় জংশন গোলচত্ত্বর থেকে জামালকে আটকের চেষ্টা করলে সে কৌশলে পালিয়ে যেতে চায়, এলাকার লোকজন চারদিক থেকে ঘেরাও করায় পালিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়। তাৎক্ষনিক তাকে আটক করে রেলওয়ে (জিআরপি) থানায় নিয়ে যান। ঘন্টাখানেকের মধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস.আই ইব্রাহিম জামাল হোসেনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তাকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে একের পর বেরিয়ে আসছে রহস্য। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জামাল অজ্ঞাত যুবকের হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে জানা গেছে। মা’দক সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ ঘটনায় ওই যুবককে হত্যা করা হয়ছে বলে স্বীকারোক্তিতে জানান।
হ’ত্যাকান্ডে সম্পৃক্ত প্রধান আসামী জামালের দেয়া তথ্যমতে অজ্ঞাত যুবকের মরদেহের অংশবিশেষ উদ্ধারের ১০দিন পর সোমবার (২০ জুলাই) পিবিআই এর এস.আই মো. ইব্রাহিম ও তার টিম অভিযান চালিয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাহেবাবাদ ইউনিয়নের টাটেরা গ্রামের একটি পুকুর থেকে জাল দিয়ে পলিথিন মোংড়ানো খন্ডিত ও অর্ধগলিত মাথা উদ্ধার করেন।
ব্রাক্ষণপাড়ার আলোচিত হত্যাকান্ড শেষে চতুর জামাল হোসেন লাকসাম চলে আসেন। গ্রেফতার এড়াতে টোকাইবেশে চলাফেরা করতেন। দিনের বেলায় তিনি এদিক-সেদিক ঘুরাফেরা করতেন। রাতের বেলায় অন্যান্য টোকাইদের সাথে রেলওয়ে জংশন এলাকায় ঘুমাতেন বলে জানা গেছে। জামাল হোসেন ব্রাহ্মণপাড়া সদরের মৃত আবদুল খালেকের ছেলে এবং ফয়েজ আলী মেম্বারের নাতি।
কুমিল্লা জেলা পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, মামলাটি অধিগ্রহনের পর ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার) পিপিএম এর নির্দেশনায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল ও ম্যান্যুয়াল তথ্য ব্যবহারের মাধ্যমে মামলার মূল আসামী জামাল হোসেন (৫০) কে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণপাড়া থানায় ইতিপূর্বে ৩টি চুরি ও একটি মাদকের মামলা রয়েছে। হত্যাকান্ডের সাথে আরো অন্যান্য ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করেন এই পিবিআই পুুলিশ সুপার। গ্রেফতারকৃত আসামী জামাল হোসেনকে ১৬৪ ধারার জবানবন্দির জন্য আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে তিনি জানান।