ডেস্ক রিপোর্ট:
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত থেকে ইকবাল সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে। তাকে কুমিল্লা পাঠানো হবে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কক্সবাজার থেকে ইকবাল কে আটক করা হয়েছে। তাকে কুমিল্লা আনা হচ্ছে।
এর আগে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন রাখা ব্যক্তিকে শনাক্ত করে পুলিশ। সন্দেহভাজন ইকবাল হোসেন নামের সেই যুবককে হন্যে হয়ে খুঁজছিল পুলিশ ও গোয়েন্দারা।
এরই মাঝে সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আরও একাধিক যুবককে ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বুধবার রাতে জেলা পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এসব বিষয় নিশ্চিত করেছে।
বুধবার অভিযুক্ত ইকবালের একটি ভিডিও গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমের কাছে কয়েকটি সিসিটিভির সমন্বয়ে করা একটি ভিডিও এসে পৌঁছায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিজ্ঞ টিম দীর্ঘক্ষণ ফুটেজগুলো পর্যবেক্ষণ করেছে বলে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
১৬ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের একটি সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যমের কাছে সরবরাহ করা হয়। সেই ভিডিওটি কয়েকটি সিসিটিভির ফুটেজের সমন্বয়ে করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন মসজিদ থেকে কীভাবে পবিত্র কুরআন শরিফ নিয়ে পূজামণ্ডপে প্রবেশ করেন এবং মণ্ডপ থেকে গদা হাতে নিয়ে ফেরেন।
গণমাধ্যমে আসা নতুন সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ১২ অক্টোবর রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে মসজিদে প্রবেশ করেন মাজারের খাদেম ফয়সাল ও হাফেজ হুমায়ুন। এরপর রাত ১০টা ৫৮ মিনিটে মসজিদে প্রবেশ করেন ইকবাল। এসময় খাদেম ফয়সাল ও হাফেজ হুমায়ুন ইকবালের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা যায়। ঠিক রাত ১১টায় তারা তিনজনই সেখান থেকে বেরিয়ে যান।
ওইদিন রাত ২টা ১২ মিনিটের দিকে পুনরায় মসজিদে প্রবেশ করে কুরআন নিতে দেখা যায় ইকবালকে। এসময় পাশেই অজ্ঞাতপরিচয় একজন ঘুমিয়ে ছিলেন, আরেকজন ছিলেন নামাজরত অবস্থায়। এর দুই মিনিট পর মেঝেতে কুরআন রেখে তাকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। এরপর রাত ২টা ১৮ মিনিটে মসজিদে আবারও প্রবেশ করে মেঝেতে রাখা কুরআন নিয়ে মসজিদ থেকে বের হতে দেখা যায় তাকে। এরপর মসজিদ থেকে বের হয়ে তাকে মূল সড়কে উঠে মন্দিরের দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়।
পরে তিনি চকবাজার স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক মোড় ঘুরে পূজামণ্ডপের দিকে রওনা হন। এ সময় তার সঙ্গে দুজন নৈশপ্রহরীর দেখা হয়। তাদের সঙ্গে ইকবালের কথাও হয়। এরপর ইকবাল কুরআন হাতে নিয়ে ডিগাম্বরীতলা সড়ক দিয়ে নানুয়া দিঘির পূজামণ্ডপে প্রবেশ করেন। পরে মূল পূজামণ্ডপের বাইরে সড়কের পাশে থাকা ফুটপাতের ওপর সীতার তিনটি প্রতিমার পাশে থাকা হনুমানের প্রতিমার পায়ের ওপর কুরআন রাখেন। এরপর হনুমানের হাতে থাকা গদা কাঁধে নিয়ে চলে যান।
পুলিশ বলছে, ইকবাল দারোগাবাড়ি মসজিদ ও মাজার থেকে কুরআন হাতে নিয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তারপর পূজামণ্ডপে রাখেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে বুধবার রাত সাড়ে আটটায় কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, পূজামণ্ডপে যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন রেখেছে তাকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এখনই তার বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে না।
গত বুধবার নগরীর নানুয়া দীঘিরপাড় এলাকায় একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন অবমাননার খবরে নগরজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং এ ঘটনায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, মন্দির ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সুত্র: যুগান্তর