কুমিল্লার কাগজ:
কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে দলটি। সে লক্ষ্যে চলছে বিরামহীন প্রচার-প্রচারণা, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ।
কুমিল্লা মহানগরী ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং ওয়ার্ড পর্যায়েও তোড়জোড় চালাচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। একই তথ্য পাওয়া গেছে কুমিল্লা বিভাগের আওতাধীন অপর দুই জেলা চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও। সাঁটানো হয়েছে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড।
আগামী ২৬ নভেম্বর, শনিবার কুমিল্লা টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া দলের কেন্দ্রীয় উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দও এ সমাবেশে অংশ নিবেন। ইতোমধ্যে সমাবেশের জন্য কুমিল্লা টাউন হল মাঠ বরাদ্দ পেয়েছে বিএনপি। দলীয় নেতাদের আশা লাখো মানুষের সমাগম হবে ২৬ তারিখের সমাবেশে।
তারা বলছেন, বিএনপির অন্যান্য সমাবেশের মতো কুমিল্লায়ও ‘পরিবহন ধর্মঘটের’ বিষয়টি মাথায় রেখে দুয়েকদিন আগে থেকেই সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করবেন আশপাশের জেলার নেতা-কর্মী ও সমথর্করা।
জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, হত্যা, হামলা-মামলার প্রতিবাদে এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দেশের অন্যান্য বিভাগীয় গণসমাবেশের মতো কুমিল্লায় বিভাগীয় সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির পাঁচ ইউনিটÑ কুমিল্লা মহানগর, দক্ষিণ ও উত্তর জেলা, চাঁদপুর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নিয়ে এ গণসমাবেশ হবে। কুমিল্লা টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠেয় বিএনপির এ সমাবেশ সফল করতে মাসখানেক আগে থেকেই জোটবদ্ধ হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপিসহ দলের অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সেই সাথে সমন্বয় রাখছেন চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নেতৃবৃন্দের সাথেও।
এরই মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বরকত উল্লা বুলুসহ কেন্দ্রীয় নেতৃৃবৃন্দ কুমিল্লায় এসে বেশ কয়েকটি প্রস্তুতি সভা করে গেছেন। এসব সভা থেকে নানা দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে নেতা-কর্মীদের। এরপর থেকেই কুমিল্লায় প্রচারণায় নেমে বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালাচ্ছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনবার্সন সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, সদস্য সচিব হাজী জসিম উদ্দিন, মহানগর বিএনপির আহবায়ক উদবাতুল বারী আবু, সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপুসহ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, কৃষকদল ও শ্রমিকদল নেতৃবৃন্দ। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সংসদীয় আসনের নেতৃবৃন্দও নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন সম্মেলন করতে।
প্রচারণার অংশ হিসেবে সোমবার নগরীর কান্দিরপাড় থেকে বাদুরতলা, ঝাউতলা, রেইসকোর্স ইস্টার্ন প্লাজা এলাকায় প্রচারণা ও লিফলেট বিতরণ করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনবার্সন সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, যে দাবি নিয়ে আমাদের এ সমাবেশ ডাকা হয়েছে, তা সফল করতে আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। তাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি। শহীদ জিয়া, বেগম জিয়া এবং তারেক রহমানের প্রতি মানুষের যে স্বতস্ফূর্ত ভালোবাসা আমরা দেখছি তাতে বোঝা যায় আমাদের এ সমাবেশ সফল হবে। শুধু বিএনপির সমর্থকরাই নয়, সাধারণ মানুষও স্বপ্রণোদিত হয়ে এ সমাবেশে অংশ নিবেন।
বিএনপির সমাবেশ ঘিরে কৃত্রিম পরিবহন ধর্মঘট ডাকা সরকারের উচিত হবে না বলে মন্তব্য করে হাজী ইয়াছিন বলেন, সরকারের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত, আরো একটু গণতন্ত্রী মনা হওয়া উচিত। তারপরও ট্রান্সপোর্ট বন্ধ থাকে- সে বিষয়টিও আমাদের নেতা-কর্মীদের মাথায় আছে। চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার নেতৃবৃন্দ আগে থেকেই চলে আসতে পারে। তারা কিছু জোন সিলেক্টও করে রেখেছে। তারা যদি আগে এসে পড়ে আমরা তাদের খাওয়া-নাস্তার ব্যবস্থা করছি। সব বাধা উপেক্ষা করে ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় গণসমাবেশে জনসমুদ্র হবে। অকল্পনীয় মানুষের উপস্থিতি তৈরি হবে। কুমিল্লা মহানগরীর যত ভোটার আছে তাদের মধ্যে মহিলা ছাড়া সব পুরুষই সমাবেশে অংশ নিবে। শুধু কুমিল্লা মহানগরীর যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে আমরা কল্পনা করতে পারি – কুমিল্লার বাকি উপজেলা এবং অন্য তিন-চারটা জেলা থেকে কি পরিমাণ মানুষ হবে।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, সমাবেশ ঘিরে আমরা প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছি। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘিয়ে প্রচারণা ও লিফলেট বিতরণ চলছে, নগরীতে মাইকিং করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি কুমিল্লায় স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে। জনসমুদ্রে রূপান্তরিত হবে টাউন হল মাঠের সমাবেশ।
বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, টাউন হল মাঠে সমাবেশের জন্য ইতোমধ্যে আমরা প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছি। সমাবেশ সফল করতে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। সে হিসেবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। শুধু কুমিল্লা নয়, চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাতেও একই অবস্থা। নিজ নিজ এলাকা থেকে নেতা-কর্মীরা সংগঠিত হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। কুমিল্লায় সফল ও সর্ববৃহৎ সমাবেশ হবে।