- ডেস্ক রিপোর্টা:
কুমিল্লায় মঙ্গলবার বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে নকলে কড়াকড়ি আরোপ করায় শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা হামলা চালায়। ছবি: নিউজবাংলা
এসএসসি পরীক্ষায় মঙ্গলবার গণিত পরীক্ষায় নকলে কড়াকড়ি আরোপ করায় কুমিল্লায় বেশকিছু কেন্দ্রে শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মিলে ১৩ জনকে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করেছে প্রশাসন।
এসএসসি পরীক্ষায় নকলে বাধা দেয়াসহ কেন্দ্রে কড়া নজরদারির অভিযোগে শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয়েছে পরীক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার কুমিল্লার বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে এসব ঘটনা ঘটে।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার হাজী নোয়াব আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা শেষে কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল পরীক্ষার্থী ও বহিরাগতরা মিলে উত্তরপত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় ৬ জন আহত হয়েছে।
অন্যদিকে মহেশপুর আজিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর খাতা নিয়ে বোর্ডে আসার পথে দুর্বৃত্তরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে নুরুল ইসলাম নামে একজন কনস্টেবল আহত হন।
এসব ঘটনায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মিলে মোট ১৩ জনকে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করেছে প্রশাসন।
বরুড়া হাজী নোয়াব আলী কেন্দ্র পরিবর্তন করে পার্শ্ববর্তী শাহেরা বানু কলেজে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড।
এছাড়া মহেষপুর আজিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সচিবকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কুমিল্লার উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. শহিদুল ইসলাম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার ছিল গণিত পরীক্ষা। পরীক্ষার নির্ধারিত সময় শেষ না হতেই উত্তরপত্র টেনে নেয়ার অভিযোগ তুলে কয়েকজন পরীক্ষার্থী এক শিক্ষকের মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। এতে পুলিশ বাধা দিলে কয়েকজন পরীক্ষার্থী ও বহিরাগতদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
এ ঘটনায় ২১ বছর বয়সী সজীব হোসেন, ১৫ বছরের তাজুল ইসলাম, ৩৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলী, ১৭ বছরের উদয় ও ফাহাদ এবং ২১ বছর বয়সী ফারুক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ফারুককে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কেন্দ্রের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ‘আমরা কাউকে বহিষ্কার করিনি। বাইরে থেকে কোনো নকল সরবরাহ করতে না দেয়ায় কয়েকজন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা শেষে মিথ্যা অভিযোগ তুলে পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা করেছে।
‘পুলিশ বাধা দিলে বহিরাগত কিছু লোক পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয়। তারা পরীক্ষার হলের বাইরে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় এবং স্কুলের দক্ষিণ পাশের ভবনের কয়েকটি কাঁচের জানালা ভাংচুর করে।’
তারা আরও বলেন, ‘খাতা নিয়ে যেতে বাধা দেয়া হবে এমন গুঞ্জন উঠলে পরীক্ষা শেষ হওয়ার ২ ঘণ্টা পর কেন্দ্র থেকে খাতা নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তারপরও পথে খাতা বহনকারী পুলিশের গাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করলে কয়েকজন আহত হয়।’
এ ব্যাপারে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব কেন্দ্র থেকে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া গেছে সেসব কেন্দ্রে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।’
বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা আফরিন মুস্তফা বলেন, ‘কর্তব্যে অবহেলার দায়ে কয়েকজন শিক্ষককে কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে সম্পূর্ণ নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘হাজী নোয়াব আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গোলযোগের খবর পেয়ে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। দ্রুত বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। পরীক্ষার খাতা ছিনিয়ে নেয়ার সময়ও টের পেয়ে পুলিশ সেগুলো রক্ষা করে শিক্ষাবোর্ডে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে।’
এছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার দায়ে ২ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং ১১ জন শিক্ষককে কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বরুড়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা কেন্দ্রে কৃষ্ণপুর মাদরাসার ১ শিক্ষার্থী ও তলাগ্রাম তারিণী চরণ লাহা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বাতাইছড়ি কেন্দ্রে কেমতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সরোয়ার আলম ও শিমুল চন্দ্র ভৌমিক; আড্ডা উমেদারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঝলম স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক জহিরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান ও রঞ্জিত সরকার; বরুড়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা কেন্দ্রে বাতাইছড়ি মাদরাসার শিক্ষক রাবেয়া আক্তার, চালিতাতলী মাদরাসার শিক্ষক ইলিয়াছ মিয়া, ঝলম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিনা ইসলাম, ছোট তুলাগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক খোকন চন্দ্র শর্মা, পয়ালগাছা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের শাহিদা আক্তারকে দায়িত্ব অবহেলার কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে।