ডেস্ক রিপোর্টঃ
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর নেতৃত্বেই মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা শেখ লুত্ফর রহমান গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার (যিনি আদালতের হিসাব সংরক্ষণ করেন) ছিলেন। মা সায়েরা খাতুন। শৈশবে বঙ্গবন্ধুকে আদর করে ডাকা হতো ‘খোকা’। চলুন দেখে নেওয়া যাক এক নজরে বঙ্গবন্ধুর বর্ণিল জীবন।
১৯২০, ১৭ মার্চ : গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জাতির জনকের জন্ম।
১৯২৭ : সাত বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ছাত্রজীবনের সূচনা হয়।
১৯৩৮, ১৬ জানুয়ারি : বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল পরিদর্শনে এলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়।
১৯৩৯ : সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ সভা করার দুঃসাহসের কারণে বঙ্গবন্ধু প্রথম কারাবরণ করেন।
১৯৩৮ : মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি বেগম ফজিলাতুন নেছার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৪২ : অসুস্থতার কারণে একটু বেশি বয়সে বঙ্গবন্ধু এন্ট্রাস (প্রবেশিকা) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
১৯৪৪ : কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগদান করেন। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি রাজনীতিতে অভিষিক্ত হন।
১৯৪৮, ২৩ ফেব্রয়ারি : তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু তার তাত্ক্ষণিক প্রতিবাদ করেন।
১৯৫৫, ১৭ জুন : ঢাকার পল্টনের জনসভা থেকে বঙ্গবন্ধু প্রথম পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবি করেন।
১৯৫৮, ১২ অক্টোবর : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এ সময় তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। এ সময় তিনি বার বার গ্রেফতার হন এবং ছাড়া পান।
১৯৬৬, ১৮ মার্চ : আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ৬ দফা গৃহীত হয়। এরপর তিনি ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেন। এ সময় তাঁকে সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকায় বার বার গ্রেফতার করা হয়। তিন মাসে তিনি আটবার গ্রেফতার হন। শেষবার তাঁকে গ্রেফতার করে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়।
১৯৬৮, ৩ জানুয়ারি : পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জন বাঙালি সেনা ও সিএসপি অফিসারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে বিছিন্ন করার অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।
১৯৬৮, ২৮ জানুয়ারি : নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে লিখিত বিবৃতি দেন। এই বিবৃতি পরে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও তাঁর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়।
১৯৭০, ১৭ ডিসেম্বর : প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তান ২৯৮টি আসন লাভ করে।
১৯৭১, ২ মার্চ : ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়। উত্তাল জনস্রোতে ঢাকা পরিণত হয় এক বিক্ষোভের শহরে। জান্তা সরকার ঢাকা শহরের পৌর এলাকায় সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ জারি করে।
১৯৭১, ৩ মার্চ : বিক্ষুব্ধ জনতা কারফিউ উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসে। সামরিক জান্তার গুলিতে মারা যান তিনজন। আহত হন কমপক্ষে ৬০ জন। এ সময় পুরো দেশ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে।
১৯৭১, ৭ মার্চ : বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক যুগান্তকারী ভাষণে ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে স্পষ্ট হয়ে যায় স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। সারা দেশে শুরু হয় এক অভূতপূর্ব অসহযোগ আন্দোলন।
১৯৭১, ১৭ মার্চ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫১তম জন্মদিন। এই দিন ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা থেকে ফিরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এদেশে জন্মদিনই বা কি আর মৃত্যু দিনই বা কি। আমার জনগণই আমার জীবন।’
১৯৭১, ২৩ মার্চ : কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ প্রতিরোধ দিবস পালনের ঘোষণা দেয়। সব সরকারি এবং বেসরকারি ভবনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু এদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন।
১৯৭১, ২৫ মার্চ : পৃথিবীর ইতিহাসে এক নৃশংসতম কাল রাত ২৫ মার্চ। এ সময় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাত সাড়ে ১১টায় শুরু হয় অপারেশন সার্চলাইট। ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা।
১৯৭১, ২৬ মার্চ : ১২টা ৩০ মিনিট ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হওয়ার আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা বার্তা ওয়্যারলেসযোগে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরীকে প্রেরণ করেন। চট্টগ্রাম বেতার থেকে আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী স্বকণ্ঠে প্রচার করেন।
১৯৭১, ২৭ মার্চ : বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এবং স্বাধীনতার ঘোষণার আলোকে বীর বাঙালি গড়ে তোলে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।
১৯৭১, ১৭ এপ্রিল : তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার ভবেরপাড়ার (বৈদ্যনাথতলা) আমবাগানে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ঘোষণা করেন অস্থায়ী রাজধানী মুজিবনগর থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়।
১৯৭১, ১৬ ডিসেম্বর : ৩০ লাখ শহীদ এবং তিন লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আসে আমাদের বিজয়। কিন্তু মুক্তির অপূর্ণতা রয়ে যায় স্বাধীনতার স্থপতি তখন নির্জন কারাগারে।
১৯৭২, ৮ জানুয়ারি : বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি পান। পিআইয়ের একটি বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনে পাঠানো হয়। ৮ জানুয়ারি ভোরে বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পৌঁছেন। তাঁর হোটেলের সামনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা করেন আমি আমার জনগণের কাছে ফিরে যেতে চাই।
১৯৭২, ১০ জানুয়ারি : এই দিনে বিজয়ীর বেশে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু। এর পরে বঙ্গবন্ধু ভঙ্গুর দেশ গঠনের কাজে নেমে পড়েন।
১৯৭৫, ১৫ আগস্ট : স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ষড়যন্ত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হন