সোহেল রানা, যশোর প্রতিনিধিঃ
যশোরের চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজীব অগ্নিদগ্ধ চার বছরের শিশু সিয়ামকে বাঁচাতে এগিয়ে এসে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন।মুমূর্ষু অবস্থায় দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তির ব্যবস্থা করেছেন। এই খবরটি জানাজানি হলে তিনি এলাকায় ব্যাপক প্রশংসিত হন।
জানা গেছে,উপজেলা হাকিমপুর গ্রামের সুজন হোসেনের চার বছারের সন্তান সিয়াম হোসেন গত ৪ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উঠানে খেলতে থাকে। এ সময় পাশের বাড়ির আজিজুর রহমানের স্ত্রী নাজমা বেগম পরিবারের কাপড়চোপড় পরিস্কার করার জন্য গরম পানিতে সিদ্ধ করছিলেন।কাপড় চোপড় উঠানোর পর ওই পানি তিনি বড় গামলাতে রেখে অন্য কাজে চলে যান। এই সময় ওই শিশু না বুঝে হঠাৎ ওখানে গিয়ে গামলা ভর্তি গরম পানিতে বসে পড়ে। মুহুর্তে তার শরীর পুড়ে যায়।ঘটনার সাথে সাথে পরিবারের লোকজন উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই দিনই শিশুটির অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। সেখানে ৭ দিন চিকিৎসার পর শিশুটির অবনতি হলে তারা খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠায়।
খুলনা মেডিকেলে ৮ দিন চিকিৎসা করানো হয়। শিশু সিয়ামের পিতা সুজন হোসেন সন্তানকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন।এখানে চিকিৎসার তেমন উন্নতি না হওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসক ঢাকা বার্ন ইউনিটে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু কাছে যা টাকা ছিল তা শেষ হয়ে যায়। এই অবস্থায় মুমূর্ষু অবস্থায় বাধ্য হয়ে সন্তানকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন। সন্তানকে বাঁচাতে পাগলের মতো অসহায় পিতা বিভিন্ন স্থানে ছুটাছুটি করতে থাকে। তারপরও কেউ তার আহবানে সাড়া দেয়নি।
খবরটি চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজীব জানতে পেরে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।পুলিশের মাধ্যমে দ্রুত যশোর থেকে অ্যাম্বুলেন্স এনে শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। ঢাকা পুলিশ বন্ধুদের সহযোগিতায় ভর্তির ব্যবস্থা করেন তিনি। বর্তমানে শিশুটি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ৭ম ফ্লোরের ৯ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন আছে। আগের থেকে শিশুটি অনেকটাই আশংকামুক্ত বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
শিশুটির পিতা সুজন হোসেন জানান,ওসি স্যারের সীমাহীন আন্তরিকতায় আমরা মুগ্ধ।অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বাবদ বেশকিছু টাকা সহযোগিতা করে ছেলেকে ভর্তির ব্যবস্থা করেছে।তিনি নিজের সন্তানের মতো সাহায্য করেছেন। আমরা তার অবদান কখনো ভুলবোনা।তিনি বলেন, ডাক্তার বলেছে আগের থেকে ছেলে অনেকটা ভালো আছে।
ওসি রিফাত খান রাজীব বলেন,আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। টাকার অভাবে একটি শিশু অকালে ঝরে যাবে বিষয়টি আমি ভাবতে পারিনি। তাই ঢাকাতে চাকরিরত আমার পুলিশ বন্ধুদের সহযোগিতায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে শিশুটিকে ভর্তির ব্যবস্থা করি। আমি জেনেছি শিশুটি আশংকামুক্ত। দোয়া করি যেন সুস্থ্য হয়ে পিতামাতার কোলে ফিরে আসে।